শেষ আপডেট: 1st August 2024 18:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পূর্ব ঘোষণা মতো বাংলাদেশ জামায়তে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল শেখ হাসিনা সরকার। বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জন নিরাপত্তা বিভাগের সচিব বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছেন।
গত রবিবার আওয়ামী লিগ ও তাদের সহযোগী ১৪ দলের জোটের বৈঠকে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
উগ্র ইসলামিক মৌলবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদেশ জামায়তী ইসলামী বা 'জামাত' নামে পরিচিত। অন্যদিকে, তাদের ছাত্র সংগঠনটি পরিচিত 'শিবির' নামে। আগে সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘ। দুটি সংগঠন একত্রে 'জামায়াত-শিবির' নামে পরিচিত।
বাংলাদেশ সরকারের অভিযোগ, কোটা বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের ঢাল করে সরকারকে উৎখাতের চেষ্টায় ছিল জামাত-শিবির। তারাই মূলত সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। হাই কোর্টের রায়ে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালে জামাতের নিবন্ধন বাতিল করে। এ বছরের গোড়ায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বহাল রাখায় জামাত বছরের গোড়ায় অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি। এবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকারি নির্দেশনায় জানানো হয়েছে জামাত কোনও কার্যকলাপ করতে পারবে না। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই দুই সংগঠনের যাবতীয় অস্তিত্ব বিলিন করে দিতে হবে।
ওই দেশের রাজনৈতিক মহল ও সুশীল সমাজের বড় অংশের মতে জামাত-শিবির এবং হেফাজতে ইসলাম প্রবল শক্তিধর হয়ে উঠেছিল। কম-বেশি সব রাজনৈতিক দলেই প্রভাব তৈরি করেছে জামাত। বাংলাদেশে এই মহলকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বাদে বাকি প্রায় সব দল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বলে অভিহিত করে থাকে।
সরকারি নোটিসেও জামাতকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছিল জামাত। তারা পাকিস্তানের সঙ্গে থাকার পক্ষে জনমত তৈরি করে তখন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে।
অন্যদিকে, ভারতে জমিয়তে উলামা এ হিন্দ নামে সংগঠনটি স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার পাশাপাশি মুসলিমদের জন্য পৃথক দেশ পাকিস্তানের দাবির বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু জমিয়ত থেকে বেরিয়ে গিয়ে বহু সংগঠন পাকিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষ নেয়।
তবে স্বাধীনতা প্রাপ্তি ও দেশভাগের পর পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে যায়। পাকিস্তানের মদতে ইসলামিক মৌলবাদীদের একাধিক সংগঠন স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই ভারত বিরোধী কার্যকলাপে শামিল হয়েছিল।
বিভিন্ন সময় বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে ভারত সরকার নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এখন প্রায় পনেরেটি ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠন ভারতে নিষিদ্ধ। যদিও তাদের কার্যকলাপে পুরোপুরি রাশ টানা যায়নি।
লক্ষণীয় হল, বিভিন্ন সময় নাম-পরিচয় বদলে ওই সব সংগঠন কাজ করে থাকে। যেমন, নয়ের দশকের শেষ দিকে সক্রিয় ইসলামিক স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া' বা সিমিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার কয়েক বছরের ব্যবধানে মাথা তোলে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া বা পিএফআই। ওই সংগঠন নিজেদের সামাজিক সংস্থা বলে দাবি করলেও কেন্দ্রীয় সরকারেরর বক্তব্য, ভারতকে ইসলামিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতেই পিএফআই সক্রিয়। গত বছর ভারত সরকার ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ব্যাপক ধরপাকড় চালায়।
ভারতে পাকিস্তানপন্থী ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠন হিসাবে পরিচিত আল কায়দা, আল বদর, জামাত উল মুজাহিদিন, লস্কর-ই-তইবা, জয়েশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদীন, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, ইসলামিক স্টেট ইত্যাদি অনেক দিন ধরেই নিষিদ্ধ। যদিও তারা গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের উপর থেকে যাবতীয় বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ১৯৬৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়া জরুরি অবস্থার সময় ইন্দিরা গান্ধী এবং ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর আরএসএস এবং তাদের সাধু-সন্তদের সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির সরকার ক্ষমতায় আসার পর আরএসএসের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। বাবরি কাণ্ডের পরও কিছুদিনের ব্যবধানে ফের প্রত্যাহার করা হয় আরএসএসের উপর নিষেধাজ্ঞা। ভারতে এখন আর হিন্দুত্ববাদী কোনও সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞা নেই। তামিল ও শিখদের কিছু সংগঠনও ভারতে নিষিদ্ধ তালিকায় আছে।
রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নিষিদ্ধ বড় সংগঠন হল সিপিআইএমএল (মাওবাদী)। এছাড়া ত্রিপুরা, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম এবং মিজোরামের কিছু সংগঠনও নিষিদ্ধ।