শেষ আপডেট: 12th November 2024 14:57
ইন্টারপোল হল পুলিশের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৬টি দেশ নিয়ে অবস্থিত এই সংস্থার সদস্য। এক দেশের পলাতক অপরাধীকে আর এক দেশ থেকে গ্রেফতার করে তাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর কাজ করে এই সংস্থা।
হাসিনার ক্ষেত্রে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ নিয়ে একাধিক মামলা হয়। একটি মামলায় বিচারক হাসিনা-সহ ৪৫জনকে আগামী ১৮ নভেম্বর আদালতে পেশ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে।
নিয়ম হল, পুলিশের কাছ থেকে আদালতের নির্দেশের কপি বিদেশ মন্ত্রকের কাছে গেলে তারা ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসিনাকে ফেরত চাইতে পারে। রবিবার পর্যন্ত ঢাকার তরফে এমন কোনও আর্জি নয়াদিল্লির কাছে পেশ করা হয়নি। তাছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস বলেই রেখেছেন, হাসিনার বিচার শেষ হওয়ার পর সরকার তাঁকে ফেরত চাইতে পারে। হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁর বিচার হতে পারে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগী ৪৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আগেই জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে অভিযুক্তদের ট্রাইবুনালের সামনে হাজির করতে পুলিশ-প্রশাসনকেও নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইবুনাল। হাসিনা-সহ সকলের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। এই জাতীয় অপরাধের বিচারের আইনটিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
এর পরেই ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অন্তর্বর্তী সরকারের তরফে। যদিও এই নিয়ে সরকারের অভ্যন্তরেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
ক’দিন আগেই প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানান, শেখ হাসিনাকে অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারতের কাছে ফেরত চাইবে না। বাংলাদেশের আদালতে হাসিনার বিচার শেষ হওয়ার পর সরকার এই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করবে। সেখানে আবার অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হওয়ার কথাই নিশ্চিত ভাবে জানান।
অনেকেই মনে করছেন, এটা আসলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আইন উপদেষ্টার ক্ষমতার লড়াইয়ের নিদর্শন। অন্তর্বর্তী সরকারে আইন উপদেষ্টা অন্যদের তুলনায় বেশি ক্ষমতাবান।
তবে প্রশ্ন উঠেছে, যখন বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে অভিযুক্তকে দেশে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে, তখনই ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হতে হয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। কিন্তু হাসিনাকে এখনও ফেরত চায়নি বাংলাদেশ। তাহলে আসিফ নজরুল এই কথা বললেন কেন?
অনেকেই মনে করছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে থাকা আসিফ নজরুল আসলে লোক ক্ষেপাতে এই কথা বলেছেন। তিনি নিজেও জানেন ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হলেই হাসিনাকে দেশে ফেরানো সম্ভব হবে না। কারণ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ নেই। তাছাড়া তাঁকে ফেরানোর বিষয়টি পুরোপুরি ভারত সরকারের উপর নির্ভর করছে।