শেষ আপডেট: 2nd October 2024 11:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সীমান্তের এপারের মতো ওপারেও বিগত কয়েক বছর ধরে সর্বজনীয় দুর্গাপুজোর আয়োজন বাড়ছিল। ওপারে তাল কাটল এবার। ইউনুসের বাংলাদেশে এবার পুজো হচ্ছে অনেক কম। উগ্র ইসলামপন্থীদের হুমকির মুখে বহু উদ্যোক্তা এবার সর্বজনীন পুজো বন্ধ রেখেছেন। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় পুজো বন্ধের ঘটনা বেশি বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা উত্তরায় এবার মুসলিমদের চাপের মুখে পুজোর জায়গা বদল করতে হয়েছে। তারপরই নানা শর্ত চাপানো হচ্ছে স্থানীয় ইসলামপন্থীদের তরফে। বলা হয়েছে পুজোর মন্ত্র মাইকে শোনানো যাবে না। ঢাক-সহ যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র মণ্ডপ বা মন্দিরের ভিতরে বাজাতে হবে। মণ্ডপের বাইরে নাচ-গানের আসর বসানো যাবে না। এরই মধ্যে ঢাকায় জাতীয় মন্দির ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বুধবার ভোররাত থেকে শুরু হয় মহালয়ার অনুষ্ঠান। বহু মানুষ সেখানে ভিড় করেন। অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকার এই মন্দিরটি বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত জাতীয় মন্দির।
একই পরিস্থিতি দেশের অন্যত্র। হুমকি দিয়ে বহু লিফলেট ছড়ানো হয়েছে দেশজুড়ে। চট্টগ্রামে ইসলামপন্থীদের এক অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে পুজো না করতে হিন্দুদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুজো করলে দেশ ছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়। আশ্চর্যের হল সামাজিক মাধ্যমে সেই সভার হুমকি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লেও পুলিশ-প্রশাসন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে ব্যবস্থা নেয়নি।
বাংলাদেশে ২৩ হাজারের কিছু বেশি পুজো হয়ে থাকে। গত বছর ৩০টি নতুন পুজো যুক্ত হয় তালিকায়। বিগত কয়েক বছর ধরে সর্বজনীন পুজো বাড়ছিল। অনেক পরিবার বন্ধ হয়ে যাওয়া পারিবারিক পুজো ফের চালু শুরু করে। এবারই তাতে ভাটা পড়ল। বাংলাদেশ সরকার সর্বজনীন পুজো উদ্যোক্তাদের আর্থিক অনুদান দিয়ে থাকে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেক পুজো কমিটি নমো নমো করে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নানা সূত্রের খবর, এবার গোটা বাংলাদেশ জুড়েই পুজো নিয়ে হুমকি, সন্ত্রাসের আবহ বিরাজ করছে। সে দেশের সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, এমন পরিস্থিতি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কখনও হয়নি। প্রকাশ্যে পুজো বন্ধের হুমকি, মিটিং-মিছিল, টাকা দাবি করা হলেও পুলিশ বা সেনা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। মৌখিকভাবে পুলিশ ও সেনাও নানা শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে। সলামপন্থীদের দাবি মেনে প্রশাসন পুজোর স্থান বদল করতে বাধ্য করেছে। খুলনায় পুজো উদ্যোক্তাদের উড়ো চিঠি পাঠিয়ে পাঁচ লাখ টাকা করে দাবি করা হয়। দশদিন হয়ে গেলেও পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
এবার কত পুজো হচ্ছে না? বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক কর্তা বলেন, প্রকৃত সংখ্যা জানতে সময় লাগবে। কারণ অনেক পুজো কমিটি সরকারিভাবে পুজো না করার কথা জানায়নি। জানালেই প্রশাসন মুখ বাঁচাতে পুজো করতে বাধ্য করবে। উদ্যোক্তারা পুজো বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানাতে চাইছেন।
ইউনুস সরকারের একটি সিদ্ধান্ত নিয়েও পুজো উদ্যোক্তাদের আপত্তি রয়েছে। সরকার ঘোষণা করেছে পুজো মণ্ডপের নিরাপত্তায় মাদ্রাসার ছাত্রদের স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে নিয়োগ করা হবে। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, সরকার বিগত বছরগুলির মতো নিরাপত্তা রক্ষী মোতায়েন করুক। মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়োগ করলে বরং অশান্তির আশঙ্কা আছে। পরিস্থিতির মুখে বড় পুজো কমিটিগুলি বেসরকারি নিরাপত্তা এজেন্সির দ্বারস্থ হয়েছে। ফলে অন্য খাতে বাজেটে কাটছাট করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে এবার পুজোয় তিনদিন ছুটি থাকছে। তারমধ্যে অষ্টমী ও নবমী যথাক্রমে শুক্র ও শনিবার সে দেশে সরকারি ছুটি। সরকার দশমী উপলক্ষে রবিবারও ছটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে রবিবার কাজের দিন। সরকারি অফিস, স্কুল, কলেজ খোলা থাকে। এবার বন্ধ থাকবে।