শেষ আপডেট: 14th April 2025 11:22
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোমবার সকাল থেকে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে বাংলা নতুন বছর ১৪৩২ বরণ অনুষ্ঠান (Bengali new year celebration)। অপারের বাংলা ক্যালেন্ডার (Bengali calender) এপারের তুলনায় একদিন এগিয়ে। বর্ষবরণের প্রধান অনুষ্ঠানটি হয় ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (Dhaka University) চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে সকালে শুরু হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। রাজধানীর শাহবাগ মোড়, টিএসসি মোড়, শহিদ মিনার, শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র, দোয়েল চত্বর হয়ে বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তা দিয়ে পুনরায় চারুকলা অনুষদে গিয়ে শেষ হয় শোভাযাত্রা।
প্রায় তিন দশক পর এবার শোভাযাত্রার নাম বদলে রাখা হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা (New year's eve joyous procession)। গত বছর পর্যন্ত নাম ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। বরাবরের মতো এবারও বাঙালি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং একাত্মতা তুলে ধরা হয়েছে শোভাযাত্রায়। ফারাক শুধু একটি। শোভাযাত্রার শুরুতে রাখা ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) মুখের আদলে ফ্যাসিস্টের (fascist) মুখাকৃতি। মোটিফের মধ্যে ছিল কাঠের বাঘ, কাগজের তৈরি বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির পায়রা, পালকি।
এছাড়া ছিল গত বছর জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনে নিহত কিশোর মুগ্ধের জলের বোতল। সে আন্দোলনকারীদের জল খাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ছিল প্যালেস্তাইনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে তৈরি মটিফ। এছাড়া ছিল সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, আশিটি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, রঙিন চরকি, তালপাতার সেপাই, পাখি, মাছ ধরার চাই, হাত পাখা, ঘোড়া, লাঙল, মাছের ডোলা এবং লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবার সব জাতিগোষ্ঠীকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। উদ্যোক্তারা জানান, এবার শোভাযাত্রায় ২৮টি জাতিগোষ্ঠী অংশ নিয়েছে।
হাসিনার মুখের আদলে তৈরি ফ্যাসিস্টের প্রথমে তৈরি মুখাকৃতিটি কে বা কারা তিনদিন আগে চারুকলা প্রাঙ্গনে গভীর রাতে পুড়িয়ে দেয়। তিনদিনের মধ্যে নতুন প্রতিকৃতি তৈরি করেন উদ্যোক্তারা। সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকি অভিযোগ করেন, হাসিনার দোসরেরা পুড়িয়ে দেয় মুখাকৃতিটি।
তবে বর্ষবরণের শোভাযাত্রাকে রাজনীতির রং দেওয়ায় অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেন। শোভাযাত্রার আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের চারুকলা অনুষদ অবশ্য এই ব্যাপারে মুখ খোলেনি। অনুষদের প্রাক্তনীরা অনেকেই শোভাযাত্রার নাম বদল এবং রাজনীতি টেনে আনা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। মঙ্গল শোভাযাত্রার মঙ্গল শব্দটি নিয়ে একাধিক ইসলামি দল আপত্তি তুলেছিল। তাদের বক্তব্য, মঙ্গল হল হিন্দু ধর্মীয় শব্দ। অন্যদিকে, চারুকলা অনুষদের প্রাক্তনীদের দাবি, উগ্র, ধর্মান্ধ, মৌলবাদী শক্তির হাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখার আহ্বান জানাতে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামকরণ করা হয়েছিল। মঙ্গল একটি বাংলা শব্দ। এর সঙ্গে ধর্মের যোগ টানা ভুল।
নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস (Md Yunus)। তিনি বলেছেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান আমাদের সামনে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ সুযোগ যেন আমরা না হারাই। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়াই হোক এবারের নববর্ষে আমাদের অঙ্গীকার।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘পয়লা বৈশাখ সম্প্রীতির দিন, মহামিলনের দিন। আজকে সবাইকে আপন করে নেওয়ার দিন। এবারের নববর্ষ, নতুন বাংলাদেশের প্রথম নববর্ষ। আসুন, আমরা বিগত বছরগুলির গ্লানি, দুঃখ-বেদনা, অসুন্দর ও অশুভকে ভুলে গিয়ে নতুন প্রত্যয়ে, নতুন উদ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে চলি। চলুন, নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’
রবিবার এক বার্তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া বার্তায় নাম না করে প্রধান উপদেষ্টাকে আক্রমণ করেছেন। বর্তমান সরকার বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেন হাসিনা।
ঢাকায় এই দিনে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সংস্থা ছায়ানট। রমনার বটমূলে বরাবরের মতো এবারও বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকাল সওয়া ছ’টায় শিল্পী সুপ্রিয়া দাশের কণ্ঠে ভৈরবী রাগালাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ‘দেশের মানুষ সর্বজনের শান্তি-স্বস্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধর্ম-জাতি-বিত্তের বিভাজন ভাঙবে। গড়বে উদার সম্প্রীতির সহিষ্ণু সমাজ। এমন আলোকিত দেশ ও সমাজের স্বপ্ন দেখি আমরা।’