শেষ আপডেট: 25th October 2024 08:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের দেদার চাকরি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। কারও ক্ষেত্রে ছাত্ররা চাপ দিয়ে পদস্থ শিক্ষক, সরকারি অফিসারদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করছে। কারও ক্ষেত্রে সরকার নিজেই চাকরি থেকে বসিয়ে দিয়েছে। রাজশাহীতে বাংলাদেশ সরকারের সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষে পোস্টিং পাওয়ার মুখে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ৯৬ জনের চাকরি কেড়ে নিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। তাঁদের মধ্যে ৯১ জন হিন্দু। চাকরি খোয়ানো ওই পুলিশ কর্মীরা গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের সময় চাকরি পেয়েছিলেন।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর পরবর্তী দিন কুড়ি ধরে চাপ দিয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার কর্মচারীকে। চাকরি কেড়েও নেওয়া হয়েছে। সেই ধারা এখনও অভ্যাহত আছে। গত বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রন্টু দাসকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতৃত্ব। ওই শিক্ষককে দিনভর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। খবর দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ বা সেনাবাহিনীর কেউ সেখানে যায়নি।
গতমাসে ইউনুস সরকার তিন পুলিশ কর্তা দেবদাস ভট্টাচার্য, কৃষ্ণপদ রায় এবং শ্যামলকুমার নাথ নামে তিন পদস্থ পুলিশ অফিসারকে চাকরি থেকে বসিয়ে দেয়। প্রথম দু’জন অ্যাডিশন্যাল আইজি এবং শেষের জন ডিআইজি পদমর্যাদার অফিসার। কৃষ্ণপদ রায় কয়েক মাস আগেও চট্টগ্রামের সফল পুলিশ কমিশনার ছিলেন। ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁদের ডেকে চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়ার চিঠি ধরিয়ে দেন।
রাজশাহীতে অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমির ঘটনাটি পুলিশমহল তো বটেই গোটা দেশেই চর্চার বিষয় হয়েছে। গত বছর শেখ হাসিনা সরকার পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে ৮৫৭ জনকে নিয়োগ করেছিল। তাঁদের মধ্যে ৮০৪ জনকে নিয়মমতো এক বছরের প্রশিক্ষণ নিতে রাজশাহীর সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমিতে পাঠানো হয়। এ মাসের গোড়ায় তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ হয়। বিদায়ী প্যারেডে শেষে তাঁদের কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। পোস্টিং অর্ডারও পেয়ে যান সকলে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরীর বিদায়ী প্যারেড পরিদর্শনের কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন রাতে তিনি সফর বাতিল করেন। পরদিন যথারীতি প্যারেড হয়।
গত সোমবার তাঁদের মধ্যে ২৫২ জন সাব ইন্সপেক্টরকে স্থানীয় থানা থেকে বরখাস্তের চিঠি ধরানো হয়। অভিযোগ প্যারেডের দিন টিফিন খাওয়ার সময় তাঁরা শৃঙ্খলা ভেঙেছেন। প্রকাশ্যে খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাহিনী ও সরকারের মর্যাদাহানী করেছেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল হাসিনা সরকারের সময়ে চাকরি পাওয়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ওই ৮০৪ জনের মধ্যে ১৭৫ বা ২১.৭৭ শতাংশ ছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। ১৭৫ জনের মধ্যে ১৬৬ জন হিন্দু। বাকিরা বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং প্রান্তিক নানা জনগোষ্ঠীর মানুষ। দেখা যাচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে চাকরি পাওয়া ১৭৫ জনের মধ্যে ৯৬জন বা ৫৪.৮৮ শতাংশের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে আজব অভিযোগের ভিত্তিতে। ৯৬ জনের মধ্যে ৯১ জন হিন্দু।
পুলিশ মহলের খবর, চাকরি কেড়ে নেওয়ার জন্য শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ তোলা হলেও যার কোনও ভিত্তি নেই। আসলে সংখ্যালঘু এবং সক্রিয় আওয়ামী লিগের সমর্থক পরিবারের সদস্য হওয়ার কারণে ওই ২৫২ জনের চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য চাকরি যাওয়ার পিছনে রাজনৈতিক কারণ আছে কি না তাঁর জানা নেই। তাঁকে জানানো হয়েছে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে উপযুক্ত তদন্ত শেষে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলির অভিযোগ সংখ্যালঘুদের ভাতে মেরে দেশছাড়া করার উদ্দেশেই চাকরি থেকে মাঝপথে বসিয়ে দেওয়া, শৃঙ্খলাভঙ্গের নামে বহিষ্কারের কৌশল নিয়েছে সরকার ও তাদের অনুগত সংগঠনগুলি। এর পিছনে জামায়াতে ইসলামীর চাপ ও মদত রয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও ওই সংগঠন প্রতিবারই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।