শেষ আপডেট: 23rd October 2024 14:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে অপরাধ দমন আইন থেকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বাতিল করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসকে চিঠি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। গত সোমবার ইউনুসকে লেখা চিঠিতে ওই সংগঠনটি বলেছে, অপরাধী যিনিই হোন স্বচ্ছ বিচার পাওয়ার অধিকার সকলের আছে। মৃত্যুদণ্ড স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী। মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে শেখ হাসিনা-সহ সাম্প্রতিক হিংসায় অভিযুক্ত কারও বিরুদ্ধে বিচার শুরু করা সঠিক কাজ হবে না।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগী ৪৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির করতে পুলিশ-প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। হাসিনা-সহ সকলের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে। এই জাতীয় অপরাধের বিচারের আইনটিতে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
বিচারালয় সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওই চিঠি মহম্মদ ইউনুসের প্রশাসনকে যথেষ্ট চাপে ফেলল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হরণের বিরুদ্ধে কাজ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। পশ্চিমী দুনিয়ায় প্রভাবশালী এই সংগঠনটির সদর দফতর নিউ ইয়র্কে। অনেকেই বলে থাকেন, এই সংগঠনের কার্যকলাপে আমেরিকার মানবাধিকার নীতি প্রতিফলিত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন আইন ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান চালু করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার নামে হত্যা, যৌন পীড়নের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের জন্য। সেই আইন প্রথম প্রয়োগ করা হয় ২০১০ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর। মুক্তিযুদ্ধের সময় খুন-সহ একাধিক অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার শুরু হয়। আদালত কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। সেই সাজা কার্যকরও হয়েছে হাসিনার সময়েই। এখন সেই আইনেই হাসিনার বিচারের তোড়জোড় শুরু করেছে ইউনুস সরকার। শেখ হাসিনাকে ভারত সরকার আশ্রয় দিয়েছে। তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা কম। বাকি অভিযুক্তদের অনেকে ইতিমধ্যে জেলে বন্দি। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বক্তব্য হাসিনার পাশাপাশি ভারত সরকারেরও হাত শক্ত করল। ইউনুস সরকার মৃত্যুদণ্ড রদ না করলে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির বক্তব্যকে নয়া দিল্লিও হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করার পক্ষে জোরালো যুক্তি হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হরণের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধেও মানবাধিকার হরণের গুচ্ছ রিপোর্ট আছে ওই সংস্থার। ইউনুস সরকারকে লেখা চিঠিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে এমন আইনে বিচার চলতে পারে না। আইনটি সংশোধন করার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগীদের বিচার শুরু করা হোক।
ইউনুস সরকার মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দলগুলির উপর দশ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারির যে চেষ্টা শুরু করেছে তা নিয়েও মতামত দিয়েছে আন্তর্জাতিক ওই মানবাধিকার সংস্থাটি। তারা বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলির অপরাধী কার্যকলাপ বন্ধ করা জরুরি। কিন্তু কোনও অপরাধের জন্য দলকে নিষিদ্ধ করা অনুচিত হবে। বরং উচিত হবে ব্যক্তি বিশেষের বিচার করে সাজা দেওয়া।
হাসিনাদের বিচার শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট আইনের আরও কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে ওই সংগঠন। তারা বলেছে, বিচার শুরুর আগে মামলার কাজে যুক্ত সব পক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। এ জন্য আদালতের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় বদল আনা দরকার। তারা আরও বলেছে, বাংলাদেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রটি আরও বিস্তৃত ও স্পষ্ট করা প্রয়োজন। এই সব কাজ আগে শেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহযোগীদের বিচার শুরু করা যেতে পারে, তার আগে নয়।