শেষ আপডেট: 13th September 2024 21:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবার সে দেশের হিন্দু সমাজ ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ করল। ঢাকার শাহবাগে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সনাতনী অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে সংঘঠিত প্রতিবাদ সমাবেশের জেরে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় দীর্ঘ সময় যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। একই সময় দেশের বাণিজ্য রাজধানী চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় সংঘটিত সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত সনাতনী সমাজ-বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন।
বাংলাদেশে ৫ অগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। তারপর দেশ জুড়ে চরম নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি টার্গেট করা হয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের। বাংলাদেশের প্রথমসারির সংবাদপত্র প্রথম আলো’-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদলে বলা হয়েছে, হিংসায় হিন্দুদের ১০৬৮টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। বেশিরভাগ ঘটনাতেই শারীরিক অত্যাচারের পাশাপাশি টাকা-পয়সা, সোনাদানা লুট করা হয়। ২২টি উপাসনাস্থলের উপরও হামলা চালানো হয় বলে প্রথম আলো জানিয়েছে। এছাড়া, নারীদের অপহরণ, যৌন নির্যাতনের অভিযোগও আছে। বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, হামলার ঘটনা আরও বেশি। সংগঠন কয়েকদিনের মধ্যেই এই ব্যাপারে বিশদ তথ্য প্রকাশ করবে।
সংখ্যালঘুদের সংগঠনগুলি প্রশ্ন তুলেছে কেন যে কোনও অস্থির পরিস্থিতিতে তাদের নিশানা করা হবে। তাদের আরও অভিযোগ, হিন্দুদের বাংলাদেশ থেকে চলে যেতে লাগাতার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
যদিও এবার সংখ্যালঘুরা প্রতিরোধেও নজির গড়েছেন। তারা পাল্টা স্লোগান তুলেছেন, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, দেশটা কি তোর বাপ-দাদার!’ তারা আরও স্লোগান দেয়, ‘আমার মাটি আমার মা, বাংলাদেশ ছাড়ব না’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘আমার মন্দির ভাঙল কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘আমি কে তুমি কে, বাঙালি বাঙালি’ ইত্যাদি। ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও খুলনা, যশোর, রাজশায়ী, বরিশালে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে বিগত কয়েক দিনে।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজকেরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। হিন্দুরা আক্রান্ত। তাই এই প্রতিবাদ।
এদিকে, আগামীকাল শনিবার দুই মার্কিন শীর্ষ কর্তা রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এবং সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র সচিব ডোনাল্ড লু ঢাকা যাচ্ছেন। তিনদিন দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পররাষ্ট্র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঢাকা যাচ্ছেন তাঁরা।
ঢাকার শাহবাগে হিন্দুদের প্রতিবাদ সভাবেশ। শুক্রবার।
নয়াদিল্লির বৈঠকে বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির পাশাপাশি সে দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চিয়তা এবং ভারত সরকারের উদ্বেগের কতা মার্কিন কর্তাদের সামনে তুলে ধরা হয়। স্বভাবতই দুই মার্কিন শীর্ষ কর্তার ঢাকা সফরের আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে হিন্দুদের নজরকাড়া প্রতিবাদ ইউনুস সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। ইউনুস একাধিকবার দাবি করেছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক। তিনি আরও দাবি করেছেন, সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম অতিরঞ্জিত খবর পরিবেশন করছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, আট দফা দাবিতে তাঁদের প্রতিবাদ চলবে। তারা চান সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের ঘটনার বিচারে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হোক। এছাড়া পুজোয় পাঁচদিন ছুটি, ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ইত্যাদি রয়েছে।