শেষ আপডেট: 8th January 2025 16:51
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনঝি এবং হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের লেবার পার্টির সাংসদ টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে ব্রিটেনের দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রী। তবে সাম্প্রতিক অভিযোগ ও বিতর্কে তাঁর আসন এখন টালমাটাল।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন হাসিনা ও তাঁর পরিবার বিদেশে প্রচুর পরিমাণে টাকা সরিয়েছেন বলে এমনিতেই অভিযোগ রয়েছে ঢাকায়। গত সপ্তাহে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে জড়িত একাধিক সম্পত্তিতে মালিকানা থাকার অভিযোগ উঠেছে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও। টিউলিপ হলেন হাসিনার বোন রেহানারা মেয়ে। তিনি এমনই চাপে পড়েছেন যে, বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মন্ত্রিসভার নৈতিকতা উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছেন টিউলিপ।
এক চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে আমার আর্থিক অবস্থা এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন সরকারের সঙ্গে পরিবারের সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছু অসত্য খবর প্রকাশিত হয়েছে। আমি নিশ্চিত, আমি কোনও ভুল করিনি। তবে সন্দেহ নিরসনের জন্য, আপনাদের মাধ্যমে এই বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত চাইছি।'
টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লন্ডনের কিংস ক্রস ও হ্যাম্পস্টেড এলাকায় শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে বসবাস করেছেন। ফাইনান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুসারে, কিংস ক্রসের একটি ফ্ল্যাট শেখ হাসিনার দলের সঙ্গে সম্পর্কিত একজন ডেভেলপার কিনে ২০০৪ সালে বিনামূল্যে টিউলিপের হাতে তুলে দেন। ২০০১ সালে ওই দুই কামরার ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল ১ লক্ষ ৯৫ হাজার পাউন্ড দিয়ে। সন্দেহ নেই, তার বাজার মূল্য এখন অন্তত ৭ থেকে ৮ লক্ষ পাউন্ড।
অন্যদিকে, হ্যাম্পস্টেডের বাড়িটি শেখ হাসিনার সরকারের আইনজীবী মইন গনির মাধ্যমে টিউলিপের বোনের নামে ট্রান্সফার হয় বলে দাবি করা হয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে টিউলিপ যে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন, সেটির মালিকও আওয়ামী লিগের যুক্তরাজ্য শাখার এক সদস্য।
বাংলাদেশের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ইতিমধ্যে টিউলিপ ও তাঁর পরিবারের সাত সদস্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে। তাঁদের দাবি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে স্থানান্তর করেছে, যার সম্ভাব্য যোগসূত্র খুঁজতে তাঁরা এই তথ্য সংগ্রহ করছেন।
টিউলিপের বিরোধীরা ইতিমধ্যে স্টারমারের কাছে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। বিরোধী শিবিরের ‘ছায়া’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ম্যাট ভিকার্স বলেছেন, 'একজন দুর্নীতি বিরোধী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। স্টারমারের উচিত বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভুলে সঠিক পদক্ষেপ করা।'
টিউলিপ সিদ্দিক আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের একজন বন্দি আইনজীবীর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেছিলেন, 'আমি একজন ব্রিটিশ এমপি। বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে আমার কোনও দায়িত্ব নেই।'
প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যদিও এখনও তাঁকে সমর্থন করছেন। তিনি বলেছেন, 'টিউলিপ যথাযথ কাজ করেছেন। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি তাঁর পাশে রয়েছি।'
তবে বিতর্কে জড়িয়ে থাকা মন্ত্রীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এখন দেখার, এই পারিবারিক বিতর্ক টিউলিপ সিদ্দিককে কতটা সমস্যায় ফেলে।