শেষ আপডেট: 3rd October 2023 11:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তথা দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-র সভাপতি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে তাঁর পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এতটাই অসুস্থ যে তাঁকে দেশে আর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য তাঁকে বিদেশে নিয়ে যাওয়া দরকার।
৭৮ বছর বয়সি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে মাস দুয়েক যাবত ভর্তি আছেন। ওই বেসরকারি হাসপাতালটি বাংলাদেশের সেরা চিকিৎসাকেন্দ্র বলে পরিচিত। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট তাঁদের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার দিদিকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। বাংলাদেশের আইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, আইনে সরকারের পক্ষে অনুমতি দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে আদালতে আর্জি জানাতে হবে।
সোমবার বিকালে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘বিএনপি নেত্রী দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। পৃথিবীর কোন দেশে এমন ব্যক্তিকে সরকার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিয়েছে!’ হাসিনা জানান, ‘অনাথ শিশুদের কল্যাণ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিগত সরকারের করা মামলায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সাজা হয়েছে। তিনি জেলে ছিলেন। বয়স ও অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে আমি মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে তাঁকে বাড়িতে থাকার অনুমতি দিয়েছি। তিনি এখন বিদেশে যেতে চাইলে তাঁকে আদালতে আর্জি জানাতে হবে। সরকার আদালতকে এড়িয়ে কিছু করতে পারবে না।‘
ঢাকায় বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ‘বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ফের জেলে ফিরে যেতে হবে। কারণ, আদালত তাঁকে জেলে পাঠিয়েছিল। জেলে ফিরে যাওয়ার পর আদালত তাঁর আর্জি মঞ্জুর করলে তবেই খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারবেন।‘ সব মিলিয়ে খালেদার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে আইনি জটিলতাকেই অস্ত্র করেছে বাংলাদেশ সরকার।
কিন্তু খালেদার দল বিএনপি সরকারের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, হাসিনা সরকারের প্রতিহিংসার শিকার তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সরকার চাইলেই প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারে। খালেদার আইনজীবী কায়সার কামালের বক্তব্য, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আর্জিকে আইন নয়, রাজনৈতিক দৃষ্টি দিয়ে দেখছে সরকার। একই অভিযোগ করেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফররুল ইসলাম আলমগীর।
দ্য ওয়াল এখন হোয়াটসঅ্যাপেও। ফলো করতে ক্লিক করুন।
বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আক্রোশ ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই আইন মন্ত্রণালয় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিদেশে চিকিৎসার আর্জি খারিজ করেছে। বিএনপি-র দাবি, ২০০৮-এ জেল বন্দি শেখ হাসিনাকে তৎকালীন সরকার চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিল। তবে সরকারের পরামর্শ মতো বিএনপি কেন নেত্রীর চিকিৎসার জন্য আদালতে আর্জি জানাচ্ছে না সেই প্রশ্নের সদুত্তর দিচ্ছেন না দলের নেতারা। একান্তে তাঁরা মানছেন, আদালতে আর্জি জানালে খালেদা জিয়াকে ফের ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরে যেতে হবে, যা তাঁর স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে, শাসক দল আওয়ামী লিগ মনে করছে, খালেদার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া রাজনৈতিক কৌশল। তিনি আসলে বিদেশে গিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দলের হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার কৌশল নিয়েছেন। বিশ্ব নেতাদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টায় আছেন। দুর্নীতির মামলা থেকে রেহাই পেতে বিশ্বনেতাদের দিয়ে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছেন। যেভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী মহম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের অর্থ নয়ছয়ের অভিযোগে হওয়া মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-সহ পশ্চিমি বিশ্বের বিশিষ্টজনেরা। আওয়ামী লিগ নেতাদের বক্তব্য, তাই খালেদার বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকেরা বলার আগে থেকে এই দাবিতে বিএনপি গত দেড়-দু’বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে।
লন্ডনের ভাষণে শেখ হাসিনা ঘুরিয়ে বিএনপি নেত্রীর কৌশলের প্রসঙ্গ টেনেছেন। খালেদার পুত্র তথা বিএনপির কার্যকরী সভাপতি তারেক রহমানও দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত। তিনি আর রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। হাসিনা সোমবার লন্ডনে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লিগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বলেন, তারেক রহমান লন্ডনে বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে দল চালাচ্ছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি তারেক সরকারি পরিকাঠামো ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে।
ঢাকায় বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী তথা আওয়ামী লিগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মামুদ বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিএনপি গিনিপিগ, রাজনীতির দাবার ঘুঁটি বানিয়েছে। তিনি সুস্থ হোন সেটা তারা চায় না। তারা চায় বেগম জিয়া আরও অসুস্থ থাকুক, যাতে তারা রাজনীতিটা করতে পারে।’