জিরো পয়েন্টে মা-বাবার সঙ্গে দেখা মেয়ের।
শেষ আপডেট: 10th March 2025 10:48
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সপিজ উদ্দিনের বয়স আনুমানিক ১০৭। ৯২ ছুঁয়েছেন আফিলা খাতুন। বয়সের বোঝা আর অসুখবিসুখে কাবু হলেও এই দম্পতি চলাফেরা করতে পারেন। তাঁরা জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) জেলার রাজগঞ্জ থানার (Rajganj police station) শোলমারি এলাকার বাসিন্দা।
তাঁদের ৭৫ বছর বয়সি মেয়ের নাম মহিলা বেগম। তিনি বাংলাদেশের পঞ্চগড় (Panchagarh district of Bangladesh) সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের মাধইপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা সীমান্তের (Banglabanda border check post) জিরো পয়েন্ট (zero point) বা শূন্যরেখায় স্বামী ও পরিবারের বাকিদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মহিলা বেগম। জলপাইগুড়ির বাড়ি থেকে তাঁর বাবা-মা’কে সেখানে হাজির করেছিল পরিবার ও এলাকাবাসী। সেখানে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী যথাক্রমে বাংলাদেশের বিজিবি (BGB) এবং ভারতের বিএসএফের (BSF) কমান্ডারদের সহায়তায় বহু বছর পর মেয়ে, মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে দেখা হয় বাবা-মায়ের। আবেগঘন সাক্ষাতের সেই দৃশ্য কেউ কেউ সমাজমাধ্যমে বিনিময় করেছেন যা ছুঁয়ে যাচ্ছে সব মন। এই দম্পতির পাসপোর্ট আছে। আগে বহুবার তাঁরা ভিসা (VISA) করিয়ে ভারতে এসে বাবা-মায়ের সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটিয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু এবার ভিসা পাননি বলে তাঁরা দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে জানান। যদিও ভারত সরকারের বক্তব্য, বাংলাদেশে গত বছর সরকার পরিবর্তন পরবর্তী অস্থিরতার কারণে ভিসা দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাস আগে থেকেই সাধারণ মানুষকে ভিসা দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা ও পর্যটন ভিসায়। মহিলা বেগম ও তাঁর স্বামী নজমূল হক কেন ভিসা পাননি তা স্পষ্ট নয়।
দুই দেশের সীমান্তের বাকি জায়গার মতো বাংলাবান্দা চেকপোস্টেরও আশপাশেও একটা সময় কাঁটাতারের বেড়া ছিল না। তখন পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই দুই দেশের নাগরিকেরা যাতায়াত করতেন। মহিলা বেগম জানিয়েছেন, কাঁটাতার বসার পর তাঁরা স্বামী-স্ত্রী পাসপোর্ট (passport) করান। বহুবার ভিসা করিয়ে জলপাইগুড়ি ঘুরে গিয়েছেন। এখন ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এদিকে, বাবা-মা’কে দেখার বাসনা তীব্র হচ্ছিল।
জানা গিয়েছে, মহিলা বেগম ও তাঁর স্বামী বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জিরো পয়েন্টে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার আর্জি জানিয়েছিলেন। বিজিবি সেই অনুরোধ বিএসএফের কাছে পৌঁছে দেয়।
দু-দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী সম্মতি দিলে ফোনে বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট দিনে জিরো পয়েন্টে আসতে বলেন। মিনিট কুড়ি তাঁদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। সাক্ষাতের সময় বিজিবি ও বিএসএফের আধিকারিকরা হাজির ছিলেন। তাঁরাও শতবর্ষী বাবা, নবতিপর মায়ের সঙ্গে মেয়ের সাক্ষাতের দৃশ্য দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
বাংলাবান্দা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে থাকা অন্যতম স্থল বন্দর। সেখান দিয়ে চারটি দেশের নাগরিকেরা যাতায়াত করেন, চলে পণ্য আদানপ্রদান। ভারত, বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান (Bhutan) ও নেপাল (Nepal) ওই বন্দর ব্যবহার করে।