শেষ আপডেট: 5th January 2025 21:01
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বন্ধুত্ব কূটনৈতিক মহলে বহু চর্চিত বিষয়। অন্যদিকে, আমেরিকায় বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামার মতো সাবেক প্রেসিডেন্ড এবং প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের মতো ডেমোক্র্যাট শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সু-সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর তিন দেশের সম্পর্ক কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে কূটনৈতি মহলে জোর জল্পনা চলছে। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার সঙ্গে বাংলাদেশে গদিচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎও নতুন দিকে মোড় নিতে পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ট্রাম্প-মোদীর বন্ধুত্ব আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। এমন হওয়াটা অসম্ভব নয়। আমরা এই ব্যাপারে সতর্ক আছি।’
সাক্ষাৎকারে ইউনুসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বন্ধুত্ব রয়েছে এবং শোনা যাচ্ছে ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাতজন সদস্য থাকতে পারেন। আপনি কি উদ্বিগ্ন যে এই ঘটনা বাংলাদেশের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে?
জবাবে ইউনুস বলেছেন, ‘এটা সম্ভব। ওঁদের (ট্রাম্প এবং মোদীর মধ্যে) সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এবং মন্ত্রিসভায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাতজন সদস্যের কারণে আমাদের সম্পর্ক কিছুটা প্রভাবিত হতে পারে। কিছু লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে।’ লক্ষণগুলি ইউনুস উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, ‘আমরা লক্ষ্য রাখছি যে সম্পর্কটা অবশেষে কোন দিকে গড়ায়।’
সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘এটাই ধরে নেওয়া যায় না যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানরা সকলে ভারতের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবেন। আমাদের চেষ্টা করতে হবে সেখানে এমন কিছু মানুষ খুঁজে পেতে যারা আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। আমাদের পূর্ববর্তী সরকারের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল। আমাদের নতুন সরকারের সঙ্গে তেমনই ভাল সম্পর্ক গড়তে হবে। এর জন্য, আমাদের কূটনৈতিক চ্যানেল এবং তার বাইরেও প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি।’
কূটনৈতিক মহল মনে করছে ইুউনুসের আশঙ্কার অন্যতম কারণ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনা। গত মাসে আমেরিকার নির্বাচনে দিন কয়েক আগে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ব্যাপারে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্স হ্যান্ডেলে ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে একহাত নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকলে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটতে দিতাম না। কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম।
আওয়ামী লিগের অভিযোগ মহম্মদ ইউনুস শুধু ডেমোক্র্যাটদের ঘনিষ্ট নন, তিনি একপ্রকার ওই দলের হয়ে গোটা বিশ্বে কাজ করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার আগে। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বিপুল অর্থ তিনি ডেমোক্র্যাট পার্টির নির্বাচনী তহবিলে ঢেলেছেন। তাঁর প্ররোচণাতেই বাইডেন সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের উপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ কায়েম করে বলে আওয়ামী লিগ বহুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। হাসিনার দল আশা করছে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতির হাওয়া ঘুরতে শুরু করবে।
ঢাকার সরকারি সূত্রের খবর, প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলীকে আশ্বস্ত করেছেন, রিপাবলিকান পার্টিতেও তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা আছেন। তাই ট্রাম্পকে নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প-মোদীর বন্ধুত্বকে তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন।