মহম্মদ ইউনুস
শেষ আপডেট: 6th March 2025 20:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভোট নিয়ে মহম্মদ ইউনুসের (Md Yunus) উল্টো সুর গাইলেন ছাত্রদের সদ্য গঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (National Citizen Party-NCP) প্রধান নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam)। রয়টার্সকে (Reuters) দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তাতে চলতি বছরে নির্বাচন নাও হতে পারে। তাঁর কথায়, ‘বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে এবং পুলিশিংয়ের যে হাল তাতে আমি মনে করি না, একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।’
দিন দশ আগেও নাহিদ ছিলেন মহম্মদ ইউনুসের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক মন্ত্রকের দায়িত্বে। বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ। নাহিদকে মাথায় রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা তৈরি করেছে নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি।
ঘটনাচক্রে নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস সদ্যই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারে। দেরি হলেও আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ভোট হবে।
নাহিদ সেখানে প্রথম রাজনীতিক যিনি ইউনুসের সময়সীমা নিয়ে সংশয় এবং অনাস্থা প্রকাশ করলেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল নয়। তাঁর কথায়, অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত সাত মাসে আইনশৃঙ্খলার যে ধরনের উন্নতি আশা করা গিয়েছিল তা হয়নি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ঘোরাঘুরি করছে, নাহিদ ইসলামকি সরকার এবং প্রধান উপদেষ্টাকে অস্বস্তিতে ফেললেন? নাহিদের বয়ান কি সরকারের সঙ্গে ছাত্রদের দলের বিভেদের ইঙ্গিত? রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে ভিন্ন মত আছে। অনেকেই মনে করছেন, ছাত্ররা আসলে সরকারের ব্যর্থতার দায় নিতে চাইছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং জিনিসপত্রের চড়া দাম নিয়ে তীব্র অসন্তোষ আছে জনমনে।
যদিও অনেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির ছাত্র নেতৃত্ব সরকারের ব্যর্থতার দায় নিতে না চাইলেও তারা ইউনুস প্রশাসনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে তাল রেখেই কথা বলছে। আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ভাবনা সরকারের মধ্যেও প্রবল। ভোট পিছিয়ে দিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা তাদের লক্ষ্য। আর সে জন্যই সংস্কারের মেগা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, যা চার-পাঁচ বছরেও বাস্তবায়ন কঠিন।
অনেকেই বলেছেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার সেই ভাবনা আড়াল করে ইউনুস ভোটের সম্ভাব্য দিনক্ষণ বললেও বারে বারে বলছেন, তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে। তাৎপর্যপূর্ণ হল সরকারের সহযোগী শক্তি জামায়াতে ইসলামি গোড়া থেকেই দ্রুত নির্বাচনের বিরোধিতা করে আসছে। তারা আগে সংস্কার, পরে নির্বাচনের আওয়াজ তুলেছে। তাই এখনই নির্বাচন চায় না। সেই তালিকায় যুক্ত হল ছাত্রদের দলও।
অন্যদিকে, বিএনপি ও তাদের সহযোগী দলগুলি দ্রুত নির্বাচন চাইছে। ইউনুসের কথা মতো জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা হলে বিএনপি সংখ্যালঘু শিবিরে পরিণত হতে পারে।
আওয়ামী লিগ নেতৃত্বের বক্তব্য, মহম্মদ ইউনুস নিজেই স্বীকার করেছেন, হাসিনা সরকারের অপসারণ ছিল ‘মেটিকুলাসলি ডিজাইনড’ পরিকল্পনা। ভোট নিয়ে ইউনুসের সঙ্গে ছাত্র নেতৃত্বের ভিন্ন বয়ানও তেমনই সুপরিকল্পিত। একদিকে ইউনুস ভোটের কথা বলছেন, অন্যদিকে, পিছিয়ে দেওয়ার রাস্তা খুলছে ছাত্ররা। আসলে ছাত্ররা সরকারের কৌশল মতই বক্তব্য প্রকাশ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তারাই আসলে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী।