শেষ আপডেট: 11th November 2024 07:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে তাঁরা ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হবেন বলে দেশটির আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, খুব শিগগির এই ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থাটির কাছে আবেদন জানাবে সরকার।
আইন উপদেষ্টার মন্তব্যের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরেই এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে। ক’দিন আগেই প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানান, শেখ হাসিনাকে অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারতের কাছে ফেরত চাইবে না। বাংলাদেশের আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিচার শেষ হওয়ার পর সরকার এই ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করবে। সেখানে আসিফ নজরুল ভিন্ন কথা বলায় অনেকেই মনে করছেন, এটা আসলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আইন উপদেষ্টার ক্ষমতার লড়াইয়ের নিদর্শন। অন্তর্বর্তী সরকারে আইন উপদেষ্টা অন্যদের তুলনায় বেশি ক্ষমতাবান। যদিও ইউনুস ও আসিফ দু’জনেই আমেরিকার ঘনিষ্ঠ।
ইন্টারপোল হল পুলিশের একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৬টি দেশ লিওনে অবস্থিত এই সংস্থার সদস্য। এক দেশের পলাতক অপরাধীকে আর এক দেশ থেকে গ্রেফতার করে তাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর কাজ করে এই সংস্থা।
হাসিনার ক্ষেত্রে ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতা বিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ নিয়ে একাধিক মামলা হয়। একটি মামলায় বিচারক হাসিনা-সহ ৪৫জনকে আগামী ১৮ নভেম্বর আদালতে পেশ করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। নিয়ম হল পুলিশের কাছ থেকে আদালতের নির্দেশের কপি পররাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে গেলে তারা ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাসিনাকে ফেরত চাইতে পারে। রবিবার পর্যন্ত ঢাকার তরফে এমন কোনও আর্জি নয়াদিল্লির কাছে পেশ করা হয়নি। তাছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস বলেই রেখেছেন, হাসিনার বিচার শেষ হওয়ার পর সরকার তাঁকে ফেরত চাইতে পারে। হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাঁর বিচার হতে পারে।
তাছাড়া ভিন্ন একটি সাক্ষাৎকারে ইউনুস আরও বলেছেন, তিনি চান দেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের পর হাসিনা এবং তাঁর সহযোগীদের বিচার শুরু করাতে। কারণ, বর্তমান বিচার ব্যবস্থা সরকার নির্ভর। হাসিনা জমানার বিরুদ্ধে এটাই ছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম অভিযোগ। তিনি চান না বর্তমান বিচার ব্যবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিচার হোক।
সেখানে উল্টো কথা বলেছেন আসিফ নজরুল। ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হতে হয় যখন বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে অভিযুক্তকে দেশে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। কিন্তু হাসিনাকে এখনও ফেরত চায়নি বাংলাদেশ। তাহলে আসিফ নজরুল এই কথা বললেন কেন?
অনেকেই মনে করছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে থাকা আসিফ নজরুল আসলে লোক ক্ষেপাতে এই কথা বলেছেন। তিনি নিজেও জানেন ইন্টারপোলের দ্বারস্থ হলেই হাসিনাকে দেশে ফেরানো সম্ভব হবে না। কারণ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনও অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ নেই। তাছাড়া তাঁকে ফেরানোর বিষয়টি পুরোপুরি ভারত সরকারের উপর নির্ভর করছে।