শেষ আপডেট: 23rd October 2024 11:52
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনকে আর চায় না, তা ইতিমধ্যেই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। প্রশ্ন হল, রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে সরানো হবে।
সে দেশের সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন, এমন কোনও বিধান নেই যা প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতিকে বরখাস্ত করা যায়। রাষ্ট্রপতি নিজে থেকে সরে না গেলে তাঁকে সরানো কঠিন। সোমবার মাঝরাত থেকে মঙ্গলবার সারাদিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং আরও কিছু সংগঠনের সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলনে স্পষ্ট মহম্মদ ইউনুসের সরকার রাষ্ট্রপতিকে সরাতে জনআকাঙ্ক্ষার যুক্তি জোরদার করার পথে হাঁটছে, যা আসলে হবে সরকার পরিচালিত গণঅভ্যত্থান।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে সাতদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে সরে যেতে হবে। নুতন রাষ্ট্রপতি কে হবেন, তাও দু-তিনদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন ওই ছাত্র সংগঠনের নব নির্বাচিত আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। মঙ্গলবার বেশি রাতে একদল ছাত্র ব্যরিকেড ভেঙে রাষ্ট্রপতির অফিস-বাড়ি বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা করলে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালায়। দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বেশি রাতে বঙ্গভবন অবরোধ তুলে নেওয়া হলেও বুধবার থেকে ঘেরায়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, গণ ভবনের মতো বঙ্গভবনে ঢুকে পড়ার মহড়া হয়ে গিয়েছে মঙ্গলবার রাতে। বারে বারে বঙ্গভবন অবরোধের পর রাষ্ট্রপতিকে সরকারের তরফে বলা হবে সরে যেতে। যদিও পদত্যাগের প্রশ্নে সরকারের পরামর্শ উপেক্ষা করার অধিকার রাষ্ট্রপতির আছে।
শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি দেখেননি, তাঁর কাছে ইস্তফাপত্রের কপি নেই, রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্যের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছিলেন, ‘মহম্মদ সাবাবুদ্দিন মিথ্যাচার করছেন। তিনি শপথ লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর আর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা অন্তর্বর্তী সরকার তা খতিয়ে দেখবে।’ আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে তিনি সম্পূর্ণ সহমত বলে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস উইং থেকে বিবৃতি দিয়ে মঙ্গলবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সরকারের সাহাবুদ্দিন বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাবান হলেন আসিফ নজরুল। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর কথা অন্তর্বর্তী সরকারের শেষ কথা হয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার তিনিই প্রথম আভাস দেন, সাহাবুদ্দিনকে তাঁরা আর বঙ্গভবনে চান না।
প্রশ্ন হল রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে সরানো সম্ভব। আর পাঁচটা দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতিকে ইমপিচ বা অভিশংসন করে সরিয়ে দেওয়ার বিধান আছে। সেই অধিকার আছে শুধু সংসদের। কিন্তু ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পরই বর্তমান রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ফলে সংসদকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রপতিতে সরানোর রাস্তা বন্ধ।
বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে কোনও কারণে রাষ্ট্রপতির পদ ফাঁকা হলে জাতীয় সংসদের স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশ সংসদের স্পিকার শিরিন সারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করায় সেই পদ শূন্য। এই পরিস্থিতিতে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাপ তৈরি করে পদত্যাগে বাধ্য করা ছাড়া সাহাবুদ্দিনকে সরানোর কোনও রাস্তা খোলা নেই।
শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করা মাত্র নতুন কেউ শপথ না নেওয়া পর্যন্ত তাঁকেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সেই কারণে সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করবেন ধরে নিয়ে নয়া রাষ্ট্রপতি হিসাবে একাধিক নাম বিবেচনায় আছে। এই তালিকায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ছাড়াও নাম আছে সে দেশের বিশিষ্ট লেখক, আলোচক ফরহাদ মাজাহারের। যদিও স্বাধীনচেতা মানুষ ফরহাদ মাজাহারকে রাষ্ট্রপতি করা নিয়ে সরকারের মধ্যেই মত বিরোধ আছে।
এখন প্রশ্ন হল রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন কতদিন অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্রদের চাপ মোকাবিলা করে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন। তিনি নিজে সংঘাত চাইছেন কি না তাও স্পষ্ট নয়। রাষ্ট্রপতির মন্তব্যকে হাতিয়ার করেই তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অনেকেই বোঝার চেষ্টা করছেন, ইউনুস সরকারের আড়াই মাসের মাথায় রাষ্ট্রপতি কেন হাসিনার পদত্যাগের ইস্যুতে মুখ খুললেন। তিনি পরিকল্পিতভাবেই কথাটি বলেছেন কি না অনেকেই বোঝার চেষ্টা করছেন। কারও কারও মতে, রাষ্ট্রপতি ভাবনাচিন্তা করেই সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীকে বলেন, হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি দেখেননি।
যদিও ৫ অগাস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। আমি তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছি। অনেকেই মনে করছেন হাসিনা দেশ ছাড়ার পর অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে অদৃশ্য শক্তির চাপে রাষ্ট্রপতি ওই কথা বলেছিলেন। এখন তিনি ফাঁস করে দিয়েছেন, হাসিনাই সঠিক। তিনি পদত্যাগ করেননি। দেশ ছাড়ার পর হাসিনা দাবি করেন, তিনি পদত্যাগ করেননি। তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে দেশ ছাড়তে।