গত মার্চে দুবাইয়ের বুর্জ খলিফায় যান সাহাবুদ্দিন। তাঁর সম্মানে রিভার ক্রুজ ও গালা ডিনারের আয়োজন ছিল। ফাইল ছবি।
শেষ আপডেট: 10th September 2024 10:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: প্রধান বিচারপতি, সংসদের স্পিকার এবং নির্বাচন কমিশনারদের পর রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনকেও সরিয়ে দিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার, এমন সম্ভাবনার কথা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছুদিন হল। এমনকী পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সাহাবুদ্দিন বিদায়ের সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়ে উঠেছে তাঁকে জড়িয়ে একটি চাঞ্চল্যকর খবরে।
এক প্রবাসী বাংলাদেশি সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম আছে, এমনকী তিনি সেই দেশের নাগরিকও। তাঁর মালয়েশিয়ার পাসপোর্ট আছে। এছাড়া দুবাইয়ে তাঁর পার্টনারশিপ ব্যবসা আছে। সংযুক্ত আরব আমির শাহিতে রয়েছে তাঁর বিলাসবহুল বাংলো।
রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে এই খবরে তোলপাড় সে দেশের রাজনীতি। অন্তর্বর্তী সরকার এখনও প্রকাশ্যে এই ব্যাপারে মুখ খোলেনি। তবে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবর, সরকার বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা শুরু করেছে। পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলতে বলা হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
যদিও দেশের প্রাক্তন বিদেশ সচিব তৌহিদ প্রকাশ্যেই বলেছেন, অভিযোগগুলির প্রাথমিক সত্যতা আছে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে তিনি অগ্রসর হবেন না। আর অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই করা তাঁর মন্ত্রকের কাজ নয়। স্রেফ অনুমানের ভিত্তিতে দেশের রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে পররাষ্ট্রের কাছে তথ্য চাওয়া যায় না।
প্রতিক্রিয়া দেয়নি রাষ্ট্রপতি ভবনও। তবে রাষ্ট্রপতি আবাস বঙ্গভবনের আধিকারিকেরা একান্তে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে মালয়েশিয়া ও আমির শাহিতে বসবাস সংক্রান্ত অধিকার তিনি ত্যাগ করেছেন। পার্টনারশিপ ব্যবসা থেকেও নিজের অর্থ তুলে নিয়েছেন। যদিও একটি সংবাদপত্র দাবি করেছে, এ বছর মার্চে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে আমির শাহিতে তাঁর ব্যক্তিগত বাংলোতে রাত কাটিয়েছেন।
প্রোটোকল অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির বিদেশে সম্পত্তি থাকাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু ভিন রাষ্ট্রে যে কোনও সময় বসবাসের সুযোগ ভোগ করাস অন্য দেশের পাসপোর্ট থাকা রাষ্ট্রপতি পদ ও দেশের অবমাননা।
সাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠার পর ফের তাঁকে অপসারণের দাবি উঠেছে বাংলাদেশে। এমনীতেই তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে নানা মহলের খবর। বাংলাদেশের সাংবিধানিক বিধি হল, রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন সংসদের স্পিকার। ওই পদে ছিলেন আওয়ামী লিগ নেত্রী শিরীন শারমিন চৌধুরী।
অভিযোগ, তিনি আওয়ামী লিগের নেত্রী বলেই আগে তাঁকে চাপ দিয়ে পদত্যাগ করানো হয়েছে যাতে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হতে না পারেন। তারফলে এক অভূতপূর্ব সাংবিধানিক সংকট তৈরি হয়েছে। তাহল জাতীয় সংসদের স্পিকার পদ কখনও ফাঁকা রাখা যায় না। এখন সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করলে কে রাষ্ট্রপতি হবেন সে ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিতে হবে সরকারকে। বিষয়টি বেশ জটিল।
তাতে নয়া মাত্রা যোগ করেছে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ। সাহাবুদ্দিন কর্মজীবনে ছিলেন জেলাস্তরের বিচারক। পরে তিনি বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার পদে চাকরি করেছেন। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর নেওয়ার পর ব্যবসা শুরু করেছিলেন বলে জানা যায়। দুবাইয়ে তাঁর ছেলের ব্যবসা আছে।