সংগৃহীত ছবি
শেষ আপডেট: 6th November 2024 21:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চট্টগ্রাম শহরের হাজারি গলিতে বুধবার রাতেও অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ ও সেনার যৌথ বাহিনী। বিকাল পর্যন্ত ৮০ জনকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনী। ধৃতরা মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, হাজারি গলি ছাড়াও চট্টগ্রাম শহরের অন্যত্রও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভীত সন্ত্রস্ত। গ্রেফতারি এড়াতে শহরের অন্য এলাকার হিন্দু পুরুষেরাও কেউ কেউ গা ঢাকা দিয়েছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লিগের সমর্থকেরা অনেকেই নিরাপত্তা বাহিনী এবং জামাতের হুমকির মুখে এলাকা ছেড়েছেন।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন কোরের লেফ্ট্যান্যান্ট কর্নেল ফিরদৌস আহমেদ সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মঙ্গলবার রাতের ঘটনা নিয়ে বাহিনীর বক্তব্য জানান। তিনি বলেন, যৌথ বাহিনীর উপর পাথর, অ্যাসিড ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। সেই হামলায় সেনার পাঁচ এবং পুলিশের সাতজন জওয়ান আহত হয়েছেন।
সেনা ও পুলিশের যৌথ বাহিনী এলাকা ঘিরে রেখেছে। সরকারি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় সেনা-পুলিশের যৌথ বাহিনী হামলাকারীদের তালিকা তৈরির জন্য বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করেছে। গ্রেফতারি এড়াতে এলাকা ছাড়া বহু হিন্দু পুরুষ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের সংঘর্ষে আহতদের নব্বই ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। সংঘর্ষ চলাকালে সেনা-পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। প্রশাসনের দাবি, শূন্যে গুলি ছোড়া হয়েছে। পাল্টা বিক্ষোভকারীরা অ্যাসিড ছোড়ে।
চট্টগ্রামের হাজারি গলি বন্দর শহরের সোনা ও ওষুধ ব্যবসার পাইকারি ব্যবসা কেন্দ্র। ব্যবসায়ীরা মূলত হিন্দু। প্রায় দেড়শো সোনার দোকান রয়েছে ওই এলাকায়। স্বর্ণ শিল্পীরা মূলত মুসলিম। তাদের মধ্যে একজন সমাজ মাধ্যমে ইসকন বা ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসিয়াসনেস সম্পর্কে আপত্তিজনক মন্তব্য করে। লেখা হয়, এটি হিন্দু জঙ্গি সংগঠন এবং ভারতের এজেন্সি 'র'-এর হয়ে কাজ করে।
সেনার বক্তব্য, মহম্মদ ওসমান গনি নামে ওই ব্যক্তি ও তাঁর ভাইকে পাঁচ-ছয়শো লোক ঘিরে নিয়ে হামলা শুরু করে। পুলিশ ও সেনা বাহিনী গেলে তাদের উপরও হামলা করা হয়।
অভিযোগ, উত্তেজনা থেমে যাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক পর সেনা ও পুলিশ এলাকায় অভিযান শুরু করে। হিন্দু সংগঠনগুলির বক্তব্য, জামায়াতে ইসলামির চাপে শান্ত এলাকা অশান্ত করে তোলে সেনা ও পুলিশের যৌথ বাহিনী। তারা হিন্দু ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। তাতেই ফের উত্তেজনা চরমে ওঠে। এলাকার হিন্দুরা প্রতিরোধ শুরু করে। সেনা-পুলিশের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত দুই তরফের লড়াই চলে।
হিন্দু সংগঠনগুলির বক্তব্য, হাজারি গলির সোনা ও ওষুধের ব্যবসার আশি ভাগই হিন্দুদের দখলে। দীর্ঘদিন ধরেই জামাতের লোকজন ওই এলাকায় হিন্দুদের ব্যবসা দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মঙ্গলবারের ঘটনাকে হাতিয়ার করে তারা পুলিশ ও সেনাকে কাজে লাগায়।
একই সঙ্গে ইসকনকে বিপাকে ফেলাও তাদের উদ্দেশ্য বলে হিন্দুরা মনে করছে। বাংলাদেশে গত ৫ অগাস্টের পর হিন্দুদের উপর লাগাতার হামলার ঘটনার প্রতিবাদে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যে সাধু, সেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যেই দেশদ্রোহিতার ধারায় মামলা দায়ের করেছে। ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতেও হিন্দুরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।