চিন্ময় কৃষ্ণ দাস
শেষ আপডেট: 3rd December 2024 07:20
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালতে তোলা হবে। গত ২৬ নভেম্বর থেকে তিনি চট্টগ্রাম আদালতে বন্দি। চিন্ময় কৃষ্ণের মামলার কারণে চট্টগ্রাম আদালতের নিরাপত্তা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। আইনজীবী এবং মামলাকারী ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। আদালতের আশপাশে জমায়েতও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকী নিরাপত্তার কারণে চিন্ময় কৃষ্ণকে আদালতে পেশ না করেই মামলার শুনানি করা হতে পারে। জেলের বাইরে তাঁর উপর হামলার আশঙ্কার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। আবার তাঁকে দেখে সংখ্যালঘুরা তাঁর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু করতে পারে।
আগেরবার তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর না হওয়ার জেরে হওয়া অশাম্তির কারণে এই আইনজীবীর মৃত্যু, ব্যাপক ধরপাকড় এবং চিন্ময় কৃষ্ণের ৭০জন আইনজীবীর নামে বিস্ফোরক আইনে মামলা হওয়ার অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।
মামলায় নাম থাকায় সোমবার রাত পর্যম্ত মঙ্গলবার চিন্ময় কৃষ্ণের হয়ে জামিনের আবেদন করতে চট্টগ্রামের কোনও আইনজীবী পাওয়া যায়নি। ঢাকা থেকে একজন আইনজীবীর মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম আদালতে যাওয়ার কথা। তিনি চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন চেয়ে লড়াই করবেন। তার আগে হিন্দু আইনজীবীদের তরফে বিচারকের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করা হবে এবং বলা হবে তাঁরা যাতে সাধুর জামিনের আবেদনের শুনানিতে থাকতে পারেন।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মঙ্গলবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার কী ভূমিকা নেয়। পুলিশ এই সাধুর জামিন আটকাতে কোমর বেঁধে নামে কি না তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবারও বাংলাদেশ সরকার নির্যাতিত হিন্দুদের স্বার্থে কাজ করা এই সাধুর জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে তাঁরে জেলে আটকে রেখে সংঘাত জিইয়ে রাখলে পরিস্থিতি ভিন্ন খাতে বইতে পারে। তার প্রভাব গিয়ে পড়তে পারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর। গত এক সপ্তাহ যাবৎ নয়াদিল্লি নানা ভাবে সংখ্যালঘু নিপীড়ন বন্ধে ঢাকার উপর চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলকেও নানা ভাবে অবহিত করেছে। চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন দেওয়ার দাবিও তুলেছে নয়াদিল্লি।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ঢাকায় বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের ডেকে ব্যাখ্যা করেছেন কেন চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার কতটা আগ্রহী।
ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, বাংলাদেশ সরকার বেশ চাপে আছে। বিশেষ করে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেফতার এবং সংখ্যালঘু নিপীড়নের বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘে এবং ভারত, ব্রিটেন-সহ একাধিক দেশের সংসদে উত্থাপিত হওয়ায়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দু ধরনের চাপে আছে। একদিকে, সংখ্যালঘুরা চিন্ময় কৃষ্ণের মুক্তির দাবিতে সরব। অন্যদিতে, জামাত-সহ উগ্র ইসলামিক দল ও সংগঠনগুলি চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন আটকানোর পাশাপাশি তাঁর নাম খুনের মামলায় যুক্ত করার দাবিতে পথে নেমেছে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম বার অ্যাসোসিয়েশন অতিসক্রিয়। ২৬ নভেম্বর চিন্ময়ের জামিন নাকচের দিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরের ঠিক বাইকে সাইফুল ইসলাম নামে এক তরুণ আইনজীবী খুন হন। বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে আইনজীবীরা সোমবার মিছিল শেষে সভা করেন আদালত প্রাঙ্গনে। সেখানে অভিযোগ করা হয়, ২৬ নভেম্বর জামিন নাকচের পর চিন্ময় কৃষ্ণ এজলাস থেকে বেরিয়ে হ্যান্ড মাইকে ভাষণ দিয়েছেন। এমনকী প্রিজন ভ্যান থেকেও তাঁর অনুগামীদের উত্তেজিত করেছেন। তার জেরেই আইনজীবী শাইফুলকে হত্যা করেছে ইসকন সমর্থকেরা। চিন্ময় কৃষ্ণের হয়ে যে আইনজীবীরা আদালতে হাজির হবেন তাঁদেরও হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।