শেষ আপডেট: 27th January 2025 16:25
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। এমনকী প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের ঘোষণা মতো চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ ভোট হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু জোট গঠনের জোর তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। তাতে নয়া মাত্রা যোগ করেছে এই মুহূর্তে জনভিত্তির নিরিখে বড় দল বিএনপি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার ঢাকায় ইসলামিক আন্দোলন দলের দফতরে গিয়েছেন। বৈঠকে আছেন ইসলামিক আন্দোলনের আমির তথা প্রধান চরমোহনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল।
উল্লেখযোগ্য হল, সাতদিন আগে জামায়াতে ইসলামির আমির শফিকুর আলম চরমোহনায় গিয়ে ইসলামিক আন্দোলনের আমিরের সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনে নথিভুক্ত ১১টি ইসলামিক দলকে এক ছাতার তলায় আনার বিষয়ে কথা হয় তাঁদের মধ্যে। বৈঠক শেষে ইসলামিক আন্দোলনের নেতা বলেন, আগামী নির্বাচনে ইসলামিক দলগুলির আসন পিছু একজন করে প্রার্থী রাখার চেষ্টা হচ্ছে। ইসলামিক ভাবনায় দেশ চালনায় সহমত ভোটারের রায় তাঁরা এক বাক্সে আনার চেষ্টা করছেন।
রাজনৈতিক মহলের খবর, জামায়াতে ইসলামি ও ইসলামিক আন্দোলনের মাধ্যমে দলগুলির বোঝাপড়া হলে তারা ভোট কেটে বিএনপি-সহ বড় দলগুলির যাত্রা ভঙ্গ করে দিতে পারে।
এই সম্ভাবনা আঁচ করেই ইসলামিক আন্দোলনের নেতার কাছে ছুটেছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল। বলাইবাহুল্য, বর্তমানে লন্ডনে ছেলের কাছে থাকা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করেই মির্জা ফখরুল ইসলামিক আন্দোলনের নেতার কাছে গিয়েছেন।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ভোট পর্যন্ত বিএনপি এবং ইসলামিক আন্দোলনের নেতারা পরস্পরকে আঘাত করে কোনও কথা বলবেন না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, আওয়ামী লিগ সক্রিয়ভাবে ময়দানে না থাকা সত্ত্বেও বিএনপি নির্বাচন নিয়ে এত অসহয়তা বোধ করছে কেন? আওয়ামী লিগকে ভোটে অংশ নিতে দেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট সংশয় আছে। তারপরও বিএনপি কেন মরিয়া হয়ে ইসলামিক দলগুলিকে কাছে টানার চেষ্টা করছে তা নিয়ে দুটি কারণ দলের অন্দর থেকে জানা যাচ্ছে।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লিগের উপর দুর্যোগ নেমে এলে বিএনপি নেতৃত্বের মনে হয়েছিল, তারা একপ্রকার ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন। ইউনুস সরকার যত দ্রুত সম্ভব ভোটের ঘোষণা দেবে বলেও আশাবাদী ছিল দল।
সেই আশায় জল ঢেলেছে তিনটি বিষয় যা দলের বিবেচনায় গোড়াতে ছিল না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের দল গঠন এখন সময়ের অপেক্ষা। তারা যাবতীয় সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে তারপর দল ঘোষণা করবে। চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের গোড়ায় দলের নাম ঘোষনা করবে ছাত্ররা। সেই দলের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামির বোঝাপড়ার কথা আগেই ঠিক হয়ে আছে।
বিএনপি নেতৃত্বের আশঙ্কা, জামাতের সঙ্গে বাকি ইসলামিক দলগুলিও ছাত্রদের দলের সঙ্গে জোট করলে বিএনপির পক্ষে একশোর বেশি আসন পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। ভোট কাটাকাটির অঙ্কে তীরে এসে তরী ডোবার ভয় পাচ্ছে দল।
খালেদা জিয়ার পার্টির আরও এক বিপদের আশঙ্কা করছে আওয়ামী লিগকে নিয়ে। আগামী মাস থেকে শেখ হাসিনার দল ময়দানে নামার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লিগ বিহীন ফাঁকা মাঠে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেটরাজকে কেন্দ্র করে দলের নিচুতলার উপর মানুষ বীতশ্রদ্ধ। অন্যদিকে, আওয়ামী লিগের উপর মানুষের ক্ষোভ অসন্তোষ ক্রমশ কমে আসছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি মনে করছে ভোট কাটাকাটি আটকাতে ইসলামিক দলগুলির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা জরুরি। তবে একদা জোট সঙ্গী জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে আর হাত মেলাতে চাইছে না দল। দলের অনেক নেতাই একান্তে মানছেন, ছাত্ররা যে দল গড়ে জামাতের সঙ্গে জোট গড়তে পারে এই অঙ্ক দলের বিবেচনায় ছিল না। নেতারা ধরে নিয়েছিলেন, আওয়ামী লিগ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। দল ফাঁকা মাঠে গোল দেবে। কিন্তু সে আশায় জল ঢেলেছে চলতি রাজনীতি।