শেষ আপডেট: 23rd January 2025 23:13
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের সঙ্গে বিএনপি-র ‘হানিমুন’ পর্ব অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। দুই শিবিরের মতপার্থক্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে নয়া মাত্রা দিয়েছে আগেই। বৃহস্পতিবার বিএনপি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃত্বের বিবাদ কার্যত সম্মুখ সমরে পরিণত হল।
বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ছাত্ররা দল তৈরি করলে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ তাঁদের ছেড়ে দিতে হবে। বিএনপি মহাসচিবের কথায়, নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া দরকার। দল গঠনের পর ছাত্ররা উপদেষ্টার পদে থাকলে সরকারকে তখন নিরপেক্ষ বলা যাবে না।
মির্জা ফখরুলের এই কথায় বেজায় চটেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব। তাদের তিন নেতা বর্তমানে ইউনুস সরকারের উপদেষ্টা। তাঁদের অন্যতম নাহিদ ইসলাম বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে দুরভিসন্ধিমূলক বলে পাল্টা মন্তব্য করেছেন। তাঁর আরও বক্তব্য, বিএনপি একদিকে ‘মাইনাস টু’ ফরমুলা বাস্তবায়নের আশঙ্কা প্রকাশ করছে। আবার নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি তুলে এক-এগারো ফিরিয়ে আনতে চাইছে।
মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস আগে হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে নিঃসর্ত সমর্থনের কথা জানিয়েছিল খালেদা জিয়ার দল। দলের কার্যনির্বাহী মহাসচিব তারেক জিয়া প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে তার দায় বিএনপি-ও নেবে। কিন্তু মাস দুই-আড়াই পর থেকেই সুর বদলে ফেলেছে বিএনপি। সরকারের উপর মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে টের পেয়ে দূরত্ব তৈরি করছে এই মুহূর্তে গণভিত্তির নিরিখে এক নম্বর দল বিএনপি। সরকার এবং সরকারের সহযোগী শক্তি ছাত্র নেতৃত্ব ও জামায়াতে ইসলামির সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়তে বাড়তে সংঘাতে পরিণত হয়।
বাংলাদেশে আওয়ামী লিগের গণ আন্দোলনের মুখে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা দখল করে। সেই কারণে ওই সরকারকে ১/১১-র সরকারও বলা হয়ে থাকে। কথিত, যে সেই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশের রাজনীতির দুই নক্ষত্র শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া অথবা দেশের মধ্যেই নজরবন্দি রাখা। দুই নেত্রীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এই পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।
নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিএনপির প্রবীণ মহাসচিবের বক্তব্যের। তাঁর কথায়, মির্জা ফখরুলের কথায় স্পষ্ট বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি তুলে ভোটের আগে ক্ষমতা দখল করতে চাইছে। সরকার গঠন করে বিএনপি ছাত্রদের রাজনীতি থেকে মাইনাস করার পরিকল্পনা করেছে।
ইউনুস সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা নাহিদ ছিলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান ছয় সমন্বয়কের একজন। বস্তুত তিনি ছিলেন ছয় সমন্বয়কের অন্যতম। আন্দোলনের কর্মসূচি তিনিই ঘোষণা করতেন। উপদেষ্টা হওয়ার পর তিনি ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। ঠিক আছে চলতি সপ্তাহেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব তাদের রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে। মির্জা ফখরুল সেই প্রসঙ্গ টেনেই বলেছেন, দল গঠনের পর ছাত্র প্রতিনিধিরা ক্ষমতায় থাকলে সেই সরকারকে আর নিরপেক্ষ বলা যাবে না। ফখরুল একথাও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার অনেক সিদ্ধান্তই নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে নিচ্ছে না। সরকারকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে বলে চাপ তৈরি করেন তিনি।
বিএনপি নেতার মন্তব্যের বিরোধিতায় গলা মিলিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেশিরভাগ নেতাই। আর এক ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইঞা ক্ষোভের সঙ্গে ঘোষণা করেছেন, দল গঠনের পর তাঁরা আর সরকারে থাকবেন না।