শেষ আপডেট: 6th October 2024 17:48
চারদিক কেমন যেন থমথমে। একটা চাপা ভয়ের পরিবেশ। উৎসবের রঙ কেমন যেন ফিকে! বাংলার মতো পড়শি দেশ বাংলাদেশেও তো এখন মা উমার আরাধনার সময়। গেল বছরও বেশ ধুমধাম করেই মাতৃ আবাহন হয়েছিল সেদেশে। চলতি বছরেও প্রায় ৩২ হাজার পুজো হওয়ার কথা। কিন্তু কোথায় কী!
এত দাঙ্গা, রক্ত, মৃত্যু, আন্দোলন, প্রতিবাদের পর সরকার বদল হতেই কেমন বদলে গেল বাংলাদেশের অলিগলি। সংখ্যলঘু হিন্দুরা 'নিজভূমে পরবাস' করছেন সেদেশের বিভিন্ন উপজেলায়। পুজো করতেও ভয় হচ্ছে তাদের মনের ভিতরে। অনেকে তো পরিবারের সুরক্ষার কথা ভেবে পুজো-আচ্ছার দিক থেকে পিছিয়ে এসেছেন।
এবারের শারদোৎসব তাই সেদেশে জৌলুসহীন। কিন্তু মা দুর্গার আগমন যে নিছক আনন্দ উৎসব, তা তো নয়। শিল্পীর শৈল্পিক ভাব প্রকাশেরও একটা প্ল্যাটফর্ম। পুজো তো আর থেমে থাকে না, তেমনই বাঙালির শিল্প ভাবনাকেও অবদমিত রাখা যায় না। এত খারাপের মাঝেও বিশ্ববাসীর চোখ টেনেছে বাংলাদেশের নাটোরের এক দুর্গা প্রতিমা।
সোনালি ধান দিয়ে মায়ের অবয়ব তৈরি করেছেন শিল্পী। দেখে মনে হবে যেন সোনায় মোড়া উমা। প্রতিমার শাশ্বত মূর্তি দেখে প্রথমেই মনে আসবে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সেই গান- ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা’।
এই প্রতিমা গড়েছেন লালবাজার এলাকার প্রতিমাশিল্পী বিশ্বজিৎ পাল। প্রতিমাশিল্পীর মতে, একমাসের বেশি সময় ধরে চেষ্টার ফল এই ব্যতিক্রমী দুর্গা প্রতিমা। চারজন প্রতিমাশিল্পী মিলে এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রথমে মাটির কাঠামো তৈরি করে তারউপর বিশেষভাবে ছোট ছোট ধান বসানো হয়েছে ফুলের মতো করে। বিশ্বজিতের বাবাও প্রতিমা শিল্পী ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর বিশ্বজিৎ সেই কাজে হাত লাগান।
এই বিশেষ প্রতিমা তৈরি করতে পঞ্চাশ কেজির মতো ধান লেগেছে। এরপর রং-তুলির সাহায্যে চোখ-মুখ এঁকে প্রতিমার আদি রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ধানে গড়া এই দুর্গাপ্রতিমা পুজো করা হবে রবি সূতম সংঘের মণ্ডপে। পূজামণ্ডপটি নাটোর শহরের লালবাজার কদমতলায় রয়েছে।
বিশ্বজিৎ পাল জানান, এই পুজোমণ্ডপে মায়ের সঙ্গে থাকবে কার্তিক, গণেশ, সরস্বতী, লক্ষ্মী, অসুর, মহিষাসুর। সব প্রতিমাই প্রথমে কাঠ, বাঁশ, পাট ও বিচালির ফ্রেম বা কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। তারপরে তাতে মাটি দিয়ে প্রতিমার আকৃতি আনা হয়েছে। তবে সবটা শুকিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হয়নি। মাটি নরম থাকা অবস্থাতেই প্রতিমা জুড়ে ধান বসিয়ে দেয়া হয়েছে। ধান এমনভাবে বসানো হয়েছে, যা দেখলে মনে হতে বাধ্য প্রতিমাগুলো সোনায় মোড়ানো।
বাংলাদেশে এই সেই নাটোর শহর, যা শুনলেই আমাদের মনে আসে কবি জীবনানন্দ দাশের কথা। মনে আসে তাঁর কালজয়ী 'বনলতা সেন' কবিতার লাইনগুলো। জীবনানন্দের হাত ধরে নাটোরও বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে স্ব-মহিমায়। বনলতা সেন শান্তির প্রতীক। সৌন্দর্যের প্রতীক। ঠিক যেমন চিরসবুজ বাংলাদেশ। সেখানে পুজোর আনন্দে, উৎসবের আনন্দে ফিরতে চায় মানুষ। মায়ের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে সকলেই যে শান্তি ফেরার অপেক্ষায়।