মহম্মদ ইউনুস।
শেষ আপডেট: 15 September 2024 03:42
দ্য ওয়াল ব্যূরো: এক মাসের বেশি হয়ে গেল বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার বিপ্লব পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। নোবেল জয়ী অধ্যাপক মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সেই সরকার দেশের অস্থির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এক কদমও এগতে পারেনি বলে প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে। দেশ জুড়ে চরম নৈরাজ্য চলছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার পাশাপাশি অবাধে লুটতরাজ চলছে। একাধিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠন দাবি করেছে, দেশে গো-অ্যাজ ইউ লাইক অর্থাৎ যেমন ইচ্ছে তেমন চলার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শাসন-প্রশাসন বলে কিছু দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ, সেনা, দুই-ই হাত গুটিয়ে আছে।
সাধারণ মানুষ, নাগরিক সংগঠন এবং রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, পুলিশ ও সেনা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়। ঘটনা-দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে গেলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকছে। হামলাবাজদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর আওয়ামী লিগের নেতা কর্মী এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলা শুরু হয়েছিল। এখনও সেই হামলা অব্যাহত। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর শনিবারই প্রথম আওয়ামী লিগও এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে দেশের চলমান অস্থিরতার তীব্র নিন্দা করে বলেছে, বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দল দ্রুত পথে নামবে। দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মনোবল অটুট আছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়।
এদিকে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পাশাপাশি শুরু হয়েছে মাজার ও সমাধির উপর হামলা। উগ্র ইসলামপন্থীরা মাজার বিরোধী। ইতিমধ্যে সে দেশে শতাধিক মাজারের উপর হামলা হয়েছে। কয়েকশো বছরের পুরনো বেশ কিছু মাজার একেবারে ধুলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পুলিশ ও সেনা বাহিনী গেলেও তারা হামলাকারীদের বাধা দেয়নি। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও-তে দেখা গিয়েছে, সেনা-পুলিশের সামনে বুলডোজার দিয়ে মাজার ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ ভাবে টার্গেট করা হয়েছে শান্তির বাণী প্রচারক সুফিদের স্মৃতি বিজড়িত প্রতিষ্ঠান ও মাজার।
পাশাপাশি দেশ জুড়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির যেন মহোৎসব চলছে। রাত ৮’টার পরই রাজধানী ঢাকা-সহ দেশের বড় নগরীগুলি আর নিরাপদ থাকছে না। পথচলতি মানুষের উপর চোরাগোপ্তা হামলা, ছিনতাই, অপহরণ বেড়ে গিয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাত ৮’টা থেকে দেড়টার মধ্যে ৫৮জন আহত ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন, যারা পথে দুষ্কৃতী হামলার শিকার হয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে মুখর হতে শুরু করেছে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের অংশ নেওয়া একাধিক সংগঠন। তাদের অন্যতম জাতীয় নাগরিক কমিটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে বলেছে মানুষ যে প্রতাশ্যা থেকে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই সব আকাঙ্ক্ষা এখনও অধরা। এর কারণ হিসাবে কমিটি মনে করে অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপরতা খুবই মন্থর।
গত ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি তৈরি হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরই একাংশকে নিয়ে। ওই দিন ইউনুস সরকারের একমাস পূর্তি হয়। নাগরিক কমিটির বক্তব্য ইউনুস প্রশাসনকে প্রবল চাপে ফেলে দেয়। চাপের মুখে শনিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে বলা হয়, ‘আমরা জানতে পেরেছি গত কয়েকদিন ধরে কিছু দেশের সুফি মাজারগুলিতে হামলা চালানো হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ধরনের বিদ্বেষমূলক হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’ তাতে আরও বলা হয়, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সহিষ্ণুতা ও সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা প্রশাসন কঠোরভাবে মোকাবেলা করবে। ধর্মীয় উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।