জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা।
শেষ আপডেট: 19th July 2024 16:05
বাহান্ন। ঊনসত্তর। একাত্তর। শাহবাগ। পথ-নিরাপত্তা প্রতিবাদ। কোটা-সংস্কার।
প্রতিবাদে দেশের জন্ম। প্রতিবাদ দেশের পরিচয়। প্রতিবাদ দেশের আত্মায়। 'দেশ' শব্দটার মধ্যেই রয়ে গিয়েছে লড়াইয়ের আবহ। বারবার যে প্রতিবাদের সামনে থাকে ছাত্রসমাজ। ধর্মান্ধতা, উগ্রপন্থা, দূর্নীতি, উদাসীনতা সবকিছুর জবাব আসে রাস্তায়। কখনও স্কুলের ছাত্ররা। কখনও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। বাংলাদেশে কেউ ছেড়ে কথা বলে না। কোটা সংস্কার আন্দোলনেও, পুলিশের উদ্যত বন্দুকের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে ছাত্ররা।
আবার অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। আবার অগ্নিগর্ভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তাল চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, খুলনা, যশোহর, বরিশাল। কার্যত 'বাংলা ব্লকেড'। ফের রাস্তায় রাস্তায় জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ। সরাসরি ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে গুলি চালাল পুলিশ। সরকারি হিসেবে, মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে তিরিশের ঘরে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, সংখ্যাটা আরও বেশি। সমাজমাধ্যম খুললেই দেখা যাচ্ছে, নিরীহ নিষ্পাপ মুখের ছবি। সঙ্গে 'ক্যাপশন' পড়ে জানা যাচ্ছে, তারা আর পৃথিবীতে নেই।
নামেই খানিক আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, নির্দিষ্ট কিছু কোটাকে ঘিরে আদতে এই আন্দোলনের শুরু। কীসের কোটা? যেমন ভারতে, তেমনই বাংলাদেশেও--'কোটা' বলতে মূলত সরকারি চাকরিতে নির্দিষ্ট কিছু সংরক্ষিত আসনকেই বোঝায়। ভারতে যেমন 'সংরক্ষণ' বিষয়টি শুধুমাত্র তফশিলি জাতি (শিডিউলড কাস্ট), তফশিলি উপজাতি (শিডিউলড ট্রাইবস) ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (আদার ব্যাকওয়ার্ড কাস্টস) জন্য থাকে, সেরকম বাংলাদেশেও সরকারি চাকরিতে একাধিক 'কোটা' রয়েছে। তার ভিত্তিতে এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আসন সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু এখানেই পরিস্থিতি ভারতের চাইতে কিঞ্চিৎ বেশি জটিল হয়ে গিয়েছে।
যেমন ভারতে সরকারি চাকরির সবচেয়ে উঁচু আসনটি রয়েছে সর্বভারতীয় ও রাজ্যের সিভিল সার্ভিসের, সেরকম বাংলাদেশেও রয়েছে 'বিসিএস' বা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস। অত্যন্ত কুলীন এই চাকরিতে রয়েছে ছাব্বিশটি আলাদা 'ক্যাডার', যার অধীনস্থ আধিকারিকরা দেশের প্রশাসনের শীর্ষ দায়িত্ব সামলান। ভারতের ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মতোই বাংলাদেশে এই পরীক্ষা নেয় বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন। চূড়ান্ত কঠিন এই পরীক্ষার নিচের ধাপে রয়েছে একাধিক গ্রেড ২ চাকরির পরীক্ষা। সেসব সমেত দেশের প্রায় সব পরীক্ষাতেই একাধিক সংরক্ষণের বন্দোবস্ত রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১০ শতাংশ নারী কোটা (অর্থাৎ মহিলাদের জন্য), ১০ শতাংশ জেলা কোটা (এটি একটি অভিনব কোটা, অগ্রসর ও অনগ্রসর জেলার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে জনসংখ্যার অনুপাতে কিছু নির্দিষ্ট আসন সেই জেলার পরীক্ষার্থীদের জন্য রাখা), ৫ শতাংশ উপজাতি কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে, মোট কোটার অনুপাত হচ্ছে ২৬ শতাংশ।
এই অবধি কোনও সমস্যা নেই। এরকম কিছু সংরক্ষণ পৃথিবীর সব দেশেই থাকে। কিন্তু এর পরেই যে কোটা রয়েছে, সেটাই বাকি সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বস্তুত, সেটিকে ঘিরেই এই আন্দোলনের সূত্রপাত। মোট ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা!
এই মুক্তিযোদ্ধা কোটার ব্যাপারটি জানতে গেলে কিঞ্চিৎ ইতিহাসের চর্চা করতে হবে। বস্তুত, এই ইতিহাস না জেনেই পক্ষে-বিপক্ষে অজস্র মতামত ঘুরপাক খাচ্ছে। ১৯৭১ সাল। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে এক অগ্নিগর্ভ বছর। সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচারে হাড়হিম করা সন্ত্রাস নেমে এসেছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। প্রায় তিন লক্ষ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল পাক বাহিনী, ধর্ষিতা হয়েছিলেন তিন থেকে চার লক্ষ বাঙালি মহিলা। পাল্টা গর্জে উঠেছিল পূর্ববঙ্গের বাঙালি। পাকিস্তান নয়, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দাবিতে শুরু হল সশস্ত্র যুদ্ধ। পূর্ববঙ্গের গ্রামেগঞ্জের নিরীহ সাধারণ দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষ অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন হাতে। শক্তিশালী পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল গেরিলা যুদ্ধ। যাতে সমর্থন যুগিয়েছিল ভারত।
এই মুক্তিযোদ্ধাদের বেশিরভাগই ছিলেন সমাজের একেবারে নিচুতলার মানুষ। অস্ত্রের চাইতে দু-মুঠো ভাতের জোগাড়েই দিন গুজরান হত তাঁদের। কিন্তু মাতৃভূমির লড়াইতে তাঁরাই এগিয়ে এসেছিলেন সামনে। সেনাবাহিনীর সাজসজ্জা, অস্ত্র, পোশাক, রসদ কিছুই ছিল না তাঁদের। হাতের সামনে যা পেয়েছিলেন, সেই নিয়েই নেমেছিলেন লড়াইতে। মনে করা হয়, প্রায় তিরিশ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছিলেন। যুদ্ধের শেষে সামান্য গ্রাসাচ্ছেদনের সুযোগও ছিল না অনেকের। বেশিরভাগই পড়াশোনা জানতেন না। অনেকে আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন। অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন। পরিবার-পরিজন সবাইকে হারিয়েছিলেন। স্বাধীনতার যুদ্ধে বীরের মত লড়াই করেও নিজেদের ভবিষ্যৎ কী হবে, কিছুই জানা ছিল না তাঁদের। ১৯৭২ সালে তাঁদের পুনর্বাসনের কথা ভেবে নবপ্রতিষ্ঠিত স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার কথা ঘোষণা করে।
কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের একাংশের অভিযোগ, এই সংরক্ষণ ব্যবস্থার যথাযথ সুবিধে তাঁরা পাননি। এই নিয়ে নাগাড়ে নানা চাপানউতোর চলছিল বাংলাদেশের রাজনীতির অন্দরে। এদিকে স্বাধীনতার পরেও একের পর এক রাজনৈতিক সংকট আছড়ে পড়েছিল বাংলাদেশে। সমাজতান্ত্রিক পথে চলতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃষক শ্রমিক আওয়ামি লিগ জোট একেবারে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করতে চায়। যার ফলে চরমে ওঠে বিক্ষোভ। শুরু হয় ষড়যন্ত্র। মাত্র চার বছরের মধ্যেই ১৯৭৫ সালে ধানমণ্ডিতে তাঁর বাড়িতে ভোর পাঁচটা নাগাদ পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাঁকে। শুরু হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। এই রাজনৈতিক টালমাটালে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই প্রস্তাবিত সুযোগসুবিধের প্রায় কিছুই পাননি। ১৯৯৭ সালে তাই মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য এই সংরক্ষণের দরজা খুলে দেওয়া হয়। ২০১১ সালে একে আরও বাড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদেরও এই কোটার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আর এতেই কার্যত আগুনে ঘি পড়ে।
বিরোধীদের অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধাদের নাম করে এইভাবে কোটাকে ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনি অবধি বাড়ানোর পিছনে আসলে অন্য এক রাজনৈতিক হিসেব রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল লড়াইটা চালিয়েছিল মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ। বস্তুত, একাত্তরের গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল কারণই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামি লিগের বিপুল জয়। ১৬৭ আসন পেয়ে আওয়ামি লিগ ন্যয্যভাবে পাকিস্তান সরকার গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু বাঙালিদের হাতে কীভাবে পাকিস্তানের উর্দুভাষীরা থাকবেন, ভেবে পাননি রাওয়ালপিণ্ডির কর্তারা। বাঙালিদের কি আর অত দায়িত্ব দেওয়া যায়? শুরু থেকেই অবজ্ঞার চোখে পূর্ব পাকিস্তানকে দেখা হত করাচি-ইসলামাবাদে। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সিংহভাগই ছিলেন আওয়ামি লিগের সদস্য সমর্থক।
যার ফলে আজও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানরা বেশিরভাগ আওয়ামি লিগ সদস্য বা সমর্থক। এদিকে মুজিবের নীতির প্রতিবাদে, বামপন্থী সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান তৈরি করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি বা বিএনপি। লক্ষ্য, জাতীয়তাবাদী আদর্শ, বকলমে দক্ষিণপন্থী রক্ষণশীলতা। তাঁদের সঙ্গে হাত মেলায় জামাত। বস্তুত, আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক লড়াইটা যতই আওয়ামি বনাম বিএনপি হোক, রাজনৈতিক পরিসরে যথেষ্ট বৈচিত্র্য রয়েছে। কিন্তু এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবার সন্তান থেকে নাতি-নাতনি অবধি বিস্তৃত করায় বিএনপি-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, এতে অন্যায়ভাবে সরকারি চাকরিতে সুবিধে করে দেওয়া হচ্ছে লিগ সমর্থকদের।
পাশাপাশি, রাজনীতি-নিরপেক্ষভাবে দেখলেও, বিষয়টি ভাবায়। মোট ৫৬ শতাংশ চাকরি সংরক্ষিত। সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য খোলা কেবল ৪৪ শতাংশ। তাহলে চাকরির বেশিরভাগ অংশ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন মেধাবীরা। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ বা বৃহত্তর অর্থে ভারতের মত বাংলাদেশেও বেকারত্ব যথেষ্ট বেশি। সরকারি চাকরি সকলের কাছে মহার্ঘ্য বস্তু। প্রতি বছর সরকারি চাকরির জন্য লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দেন। এই মুক্তিযোদ্ধা কোটার ফলে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।
মুক্তিযোদ্ধারা কী বলছেন? বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও পরবর্তীতে অধ্যাপক এম এম আকাশ যেমন বিবিসি বাংলাকে সাফ জানিয়েছেন, 'আমি মনে করি, আমার যে অর্থনৈতিক অবস্থা, তাতে আমার মেয়ের তো এই কোটা পাওয়া উচিত নয়। সে প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই যেন চাকরি পায়।' অপর এক মুক্তিযোদ্ধা, জিয়াউর হাসান জানালেন, 'একেবারে তুলে দেওয়া ঠিক নয়, তবে যে শতকরা ভাগ রয়েছে, সেটা যদি একটু কমানো যায়, আমাদের আপত্তি নেই।' অবশ্য উল্টো মতটাও আছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধারা এই কোটার সপক্ষেও মুখ খুলেছেন।
২০১৮ সালে এই কোটা বাতিলের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের রাজনীতি। দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আঁচ এসে পড়েছিল ঢাকায়। যার ফলে চাপে পড়ে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করে দেন, কোটা ব্যবস্থা তুলে নেবে সরকার। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশের সন্তানরা এর প্রতিবাদে আদালতের দ্বারস্থ হন। হাইকোর্ট রায় দেয়, কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া বেআইনি। এদিকে সরকারের তরফেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে মান্যতা দিয়ে নতুন নির্দেশিকা জারি করতে দেখা যায়না। ফলে ফের উত্তপ্ত হতে থাকে শিক্ষাঙ্গন।
১৯৭২ সাল থেকেই বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা, জেলা ও নারী কোটা ছিল। ১৯৮৫ সালে তাতে যোগ হয় উপজাতি সংরক্ষণ, ২০১২ সালে প্রতিবন্ধী কোটা যোগ হয়। কিন্তু আপাতত সব সমস্যার মূলে, এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা। প্রশ্ন উঠেছে, স্বাধীনতার পরে এত বছর হয়ে গেল। এখনও কি মুক্তিযোদ্ধারা অনগ্রসর? আর যদি মুক্তিযোদ্ধারা অনগ্রসর হ'ন, তাহলে তাঁদের নাতি-নাতনিরা কীভাবে সেই যুক্তিতে অনগ্রসর হবেন? একজন যদি সংরক্ষণের সুবিধে পান, তাঁর পরিবার কি তাহলে আর পিছিয়ে থাকেন?
বাংলাদেশের সংবিধানে সমাজের অনগ্রসর শ্রেণিকে সুবিধে দেওয়ার কথা রয়েছে। রয়েছে নারীদের সুযোগসুবিধে দেওয়ার কথা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কথা আলাদা করে কিছু লেখা নেই। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কোটা বাতিল হলে সংবিধান অবমাননা হতে পারে, এমন যুক্তিটাই বা কী? এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন চাকরিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের কোটা। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতে রয়েছে আনসার ও সার্ভিসমেন কোটা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরিতে রয়েছে ৫০ শতাংশ নারী কোটা। এই নানাবিধ সংরক্ষণের বেড়াজালে অতিষ্ঠ মানুষ। যার ফলে এবার বৃহত্তর ক্ষেত্রে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নেমেছে ছাত্রছাত্রীরা।