শেষ আপডেট: 14th December 2024 20:21
দ্য ওয়াল ব্যূরো: বাংলাদেশের পুলিশ হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনায় আরও চার অভিযুক্তকে শনিবার গ্রেফতার করেছে। প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের অফিসের প্রেস উইং শনিবার জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানবাজার এবং স্থানীয় লোকনাথ মন্দিরে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ওই চারজনকে। এই নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৭৪। মোট ৮৮টি ঘটনা নিয়ে পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সফিকুল আলম গত মঙ্গলবার জানিয়েছিলেন।
ঘটনা হল, তার আগের দিন অর্থাৎ সোমবার ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি ঢাকা সফরে গিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে এসেছিলেন সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় ভারত সরকার বিরক্ত। বিদেশ সচিবের ঢাকা সফরের পরদিনও বাংলাদেশ সরকার বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল হিন্দুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তারপরও চাপ বজায় রেখেছে ভারত সরকার। তার সঙ্গে যুক্ত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া। শুক্রবারই হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জানান, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন বন্ধে তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক করেছে। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের ঘটনাগুলি নিয়ে খোঁজখবর রাখছেন। বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘটনাগুলি নিয়ে লাগাতার আলোচনা চালাচ্ছে বলেও জানানো হয়।
আবার শুক্রবারই বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর লোকসভায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায় সে দেশের সরকারের। বাংলাদেশের স্বার্থেই সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া জরুরি। দেখা গেল চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ আরও একটি হামলার ঘটনায় পদক্ষেপ করল। বাংলাদেশ সরকার যে চাপে পড়েছে তার প্রমাণ প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তৎপরতা। পুলিশ সদরের পাশাপাশি প্রেস উইংও আলাদা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সংবাদমাধ্যমকে জানাচ্ছে। বাংলাদেশের মিডিয়াও গুরুত্ব দিয়ে খবরগুলি প্রকাশ করছে।
যা থেকে মনে করা হচ্ছে, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনাগুলিকে মান্যতা দিতে শুরু করেছে ইউনুস সরকার। ভারতের বিদেশ সচিবের ঢাকা সফরের আগে অভিযোগগুলিতে অতিরঞ্জিত বলা হচ্ছিল খোদ সরকারি মহল থেকে। এখন সরকারি কর্তারা সে কথা বলা বন্ধ করলেও বাংলাদেশ সরকার নতুন কৌশল নিয়েছে। সে দেশের নাগরিক সমাজের একাংশ বিবৃতি দিয়ে অভিযোগ করছে, সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ ভারতীয় মিডিয়ার ষড়যন্ত্র।
সুনামগঞ্জের ঘটনাটি এ মাসের তিন তারিখের। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থানার মংলারগাঁও গ্রামে স্থানীয় তরুণ অশোক দাস ফেসবুকে ইসলামের নবি মহম্মদ সম্পর্কে আপত্তিজনক পোস্ট দেয়। স্থানীয় মুসলিম সমাজ তাতে আপত্তি করলে তিনি পোস্টটি ডিলিট করে দেন। তারপরও ক্ষিপ্ত জনতা তাঁর উপর চড়াও হয়। পুলিশ গিয়ে অশোক দাসকে নিজেদের হেফাজতে নিলে ইসলামপন্থীরা তাঁকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টায় তা সম্ভব হয়নি। ক্ষিপ্ত জনতা এরপর এলাকার হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। আক্রমণ করা হল লোকনাথ মন্দিরেও।
ওই ঘটনায় পুলিশ শনিবার ১২ জনের নাম-সহ মোট ১৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আলীম হোসেন, সুলতান আমম্মেদ রাজু, ইমরান হোসেন ও শাজাহান হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।
৩ ডিসেম্বরের ঘটনায় পুলিশ কেন ১৪ তারিখ মামলা দায়ের করল তা নিয়ে নানা মহল প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশের বক্তব্য, তারা তদন্ত চালাচ্ছিল। ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়ায় গ্রেফতার করা শুরু হয়। চারজনকে শনিবার গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।