কায়রোতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস
শেষ আপডেট: 19th December 2024 19:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কের পুনরুজ্জীবন চেয়ে ফের কথা বললেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। বৃহস্পতিবার কায়রোতে ডি-৮ সম্মেলনের ফাঁকে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কথা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ওই আট দেশের মঞ্চের সদস্য দেশগুলি হল বাংলাদেশ, ইজিপ্ট, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুর্কি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতা গড়ে তুলতে ১৯৮৫ সালে সার্কের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ভারত ও বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় তখন যথাক্রমে রাজীব গান্ধী এবং হুসেইন মহম্মদ এরশাদ। বাকি দেশগুলি হল পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। চিন জাপান, আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান প্রভৃতি দেশ সার্কের পর্যবেক্ষক। সদস্য দেশগুলির মধ্যে সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তোলাই সার্কের উদ্দেশ্য। প্রতি বছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সদস্য দেশগুলিতে সার্কের আয়োজন হয়ে আসছিল। তাতে ছেদ পড়ে ২০১৬ সালে।
ওই বছর ইসলামাবাদে সার্কের সম্মেলন প্রথমে বয়কটের কথা ঘোষণা করে ভারত। এরপর বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কাও একই সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের তৎকালীন বিদেশ সচিব এস জয়শঙ্কর সাফ জানান, পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে দিনে বাণিজ্য করে, রাতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটায়। এমন একটি দেশের সঙ্গে ভারত বিশেষ সম্পর্ক রক্ষায় আগ্রহী নয়। তাছাড়া ২০১৬-র সার্ক সম্মেলনের আগে জম্মুর উরিতে ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে পাকিস্তানি জঙ্গিদের হানায় ১৭জন সেনার মৃত্যুর ঘটনাও ভারতের ইসলামাবাকে সার্ক সম্মেলন বয়কটের একটি কারণ ছিল। ২০১৯-এ ভারতের বিদেশ মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর জয়শঙ্কর আরও জোরালো ভাবে তুলে ধরেছেন কেন নয়াদিল্লি সার্কের পুনরুজ্জীবনে আগ্রহী নয়। বর্তমানে ওই সহযোগিতা সংস্থার সদর সচিবালয় কাঠমাণ্ডুতে। ভারত নেপাল সরকারকে সার্ক নিয়ে অবস্থান জানিয়ে রেখেছে।
সেই সার্কের পুনরুজ্জীবন চেয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনুস। এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে ইউনুস ও শাহবাজ শরিফের আলোচনায় সার্ক প্রসঙ্গ উঠেছিল। তখন ইউনুস পাক প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন কীভাবে সার্কেক পুনরুজ্জীবন ঘটানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে যেতে।
বৃহস্পতিবার কায়রোর বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সার্ক প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। ইউনুসকে তিনি বলেন, আপনি এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন। বাংলাদেশ কোনও সম্মেলনের আয়োজন করলে পাকিস্তান পাশে থাকবে।
কূটনৈতিক মহল মনে করছে, ভারতের উপর চাপ তৈরি করতেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বর্তমান শাসকেরা সার্কের পুনরুজ্জীবন চাইছেন। প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে ভারতের সুসম্পর্ক ছিল শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে। সেই সম্পর্কও এখন সরু সুতোয় ঝুলছে। নয়া দিল্লির কর্তাদের ধারণা, ইউনুস ও শাহবাজ মনে করছেন, চলতি পরিস্থিতিতে হিন্দুস্থানের পক্ষে সার্কে ছড়ি ঘোরানো সম্ভব হবে না। সার্কের মঞ্চ ব্যবহার করে দু-দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এই ফাঁকে সার্কের মুখ হতে চাইছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ।
সার্ক পুনরুজ্জীবনে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিশেষ আগ্রহের আরও একটি কারণ দুই দেশের অর্থনীতির বেহাল দশা। ৫ অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা বেহাল। পাকিস্তান এই সুযোগে বাংলাদেশে সুতো রপ্তানিতে আগ্রহী। পাকিস্তান বাংলাদেশকে চিনি উৎপাদনেও সহযোগিতা করতে আগ্রহী। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ইলিশ-সহ নানা ধরনের মাছ এবং সবজি পাকিস্তানে রপ্তানিতে আগ্রহী। সার্কের মঞ্চ ব্যবহার করলে তৃতীয় দেশগুলি এই ধরনের রপ্তানি-আমাদানি বাণিজ্যে সহযোগিতা করতে বাধ্য হবে। সোজা কথায় ভারতের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান-বাংলাদেশর বাণিজ্য চালু করতে হলে সার্কের পুনরুজ্জীবন জরুরি।