শেষ আপডেট: 3rd February 2025 20:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের দিন ঘনিয়ে এসেছে। মহম্মদ ইউনুসের সরকারকে চলে যেতে হবে। ইউনুস সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বলেন, এই সরকারের প্রতিটি বেআইনি কাজের বিচার হবে। মানুষের অধিকার, মুখের খাবার কেড়ে নেওয়ার জন্য শাস্তি পেতে হবে। আমি বলে রাখি, সেই দিন বেশি দূরে নয়।’
রবিবার রাতে অনলাইন প্লাটফর্ম ‘এ-টিম’র সাপ্তাহিক আলোচনায় অংশ নেন হাসিনা। সেখানেই ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লিগের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে প্রথম মুখ খোলেন হাসিনা। দলের কর্মীদের উদ্দশে বলেন, ‘তোমাদের ঝুঁকি নিয়ে কিছু করতে হবে না। তোমরা সাধারণ মানুষের কাছে যাবে। আমাদের ওই শ্রমিক যে চাকরি হারা, আমাদের ওই কৃষক যারা সার পাচ্ছে না, হাহাকার করছে তাদের কাছে যাবে। আমাদের অনগ্রসর যারা আছে তাদের কাছে যাবে। তাদের খোঁজ নেবে। তাদেরকে নিয়েই পথে নামতে হবে।’
বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত দাশগুপ্ত হাসিনার অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সঙ্গে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও ইনফ্লুয়েন্সার অমি রহমান পিয়াল। সেখানে অনলাইনে আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মী সমর্থকেরা দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করেন। সেই সব প্রশ্নকে বিবেচনায় রেখে ভাষণ দেন আওয়ামী লিগ নেত্রী। ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আওয়ামী লিগ। হাসিনা বলেন, ‘অবরোধের দিন পূজা আছে। কাজেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ভিন্ন ভাবে ওটা পালন করতে হবে। যাতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সমস্যা না হয়।
গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারাতে হয় আওয়ামী লিগ নেত্রীকে। তাঁর বিরুদ্ধে কোটা ব্যবস্থার অবসান চেয়ে পথে নেমেছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে ছাত্রদের নতুন একটি সংগঠন। সেই সংগঠনের নেতাদের উদ্দেশে হাসিনার প্রশ্ন, ‘কী আন্দোলন করল ছাত্ররা। আজ কেন বাচ্চারা স্কুলের পা্ঠ্য বই সময়ে পায় না? দলের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। সবাইকে এক হয়ে থাকতে হবে। আর যে কর্মসূচি আমরা দিয়েছি তা সফল করতে হবে। কারণ রাষ্ট্র চালাতে ইউনুস সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ।’
প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিনি সরকার চালানোর নামে লুটপাট করছেন। ছাত্রলিগ কোনও নিষিদ্ধ সংগঠন নয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সংগঠনতে ব্যান করার এক্তিয়ার ইউনুস সরকারকে কে দিয়েছে? ছাত্রলিগকে ব্যান করার সে কে!’
আওয়ামী লিগের শাসনামলে মানুষ ভালো ছিল দাবি করে হাসিনা বলেন, ‘আজ সাধারণ মানুষের আয় রোজগারের কোনও ব্যবস্থা নেই। সারাদিনের কামাই দিয়ে একজন দিনমজুর একবেলার খাবার জোটাতে পারে না। আওয়ামী লিগের সময়ে তো এরকম ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে একজন দিনমজুর কাজ করে যা আয় করতো তা দিয়ে সংসার চালিয়েও তার হাতে টাকা থাকতো। এখন আর সেইদিন নেই। আজ কৃষক সার পায় না, সেচ পায় না, বিদ্যুত পায় না। আজকে শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়ছে। ইন্ডাস্ট্রি একের পর এক পুড়ছে। তারা পুড়িয়ে দিচ্ছে অথবা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকদের উপর চরম অত্যাচার হচ্ছে। প্রায় এক হাজার সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন। কেউ কেউ কারাগারে বন্দি। এমনকী তাদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক মাসে পুলিশের উপর হামলার নিন্দা করেন হাসিনা। তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে পুলিশের উপর সব থেকে বেশি অত্যাচার হচ্ছে। পুলিশকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা, হাত কেটে ফেলা, পা কেটে ফেলা, বা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা, কসাইখানায যেমন পশু হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে ঠিক সেভাবে মানুষকে ঝুলিয়ে রাখা। এধরনের অনাচার আর কত চলবে? দেশবাসী শান্তিতে থাকতে পারছে না। চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, এভাবে আর কতদিন চলবে। যে কথা বলবে তাকেই ওরা মারবে। বাক্ স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। সমস্ত মিডিয়া তাদের কন্ট্রোলে। সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের কোনও স্বাধীনতা নেই। অনেক সাংবাদিক এখনও কারাগারে। ছয় সাতজনকে তো হত্যাই করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ কোথায় গেছে? জুলাই মাসের আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের একটা মর্যাদা ছিল বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হত। বাংলাদেশকে বলা হতো উন্নয়নের বিস্ময়।’