মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং-ফাইল চিত্র
শেষ আপডেট: 6th March 2025 19:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের (Bangladesh) প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস (Md Yunus) আগামী ২৬ মার্চ চিন (China) সফরে যাচ্ছেন। ২৮ মার্চ বেজিংয়ে (Beijing) চিনের প্রেসিডেন্ট সি জিংপিনের (Xi Jinping) সঙ্গে ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হতে পারে। ইউনুসের চিন সফর প্রায় এক সপ্তাহ গড়াতে পারে।
২৫ থেকে ২৮ মার্চ চিনের হাইনান প্রদেশে (Hynan province) হবে বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়ার (The Boao Forum for Asia) সম্মেলন। ইউনুস ২৭ তারিখ সেই সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ বছরই বাংলাদেশ-চিন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর।
তাৎপর্যপূর্ণ হল প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে ইউনুসের এই সফরের জন্য চিন বিশেষ বিমান (special flight) পাঠাচ্ছে। যাতে ঢাকা (Dhaka) থেকে তিনি সরাসরি হাইনান গিয়ে সেখান থেকে বেজিং যেতে পারেন। কূটনৈতিক মহল মনে করছে ভারত-বাংলাদেশ শীতল সম্পর্কের সুযোগ নিতে চাইছে চিন। তাই ইউনুসকে বিশেষ খাতির করার আয়োজন। চিনে ইউনুসের বাকি কর্মসূচি চূড়ান্ত না হলেও তাঁর সফরের সিদ্ধান্ত ফাইনাল।
২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ওই দিন সরকার প্রধানের সকাল থেকে ব্যস্ততা চলে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে। রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের মধ্য দিয়ে সরকারি কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে। তারপর এক পক্ষকাল ধরে চলে সরকারি কর্মসূচি। তাতে অংশ নেন সরকার প্রধান। অবশ্য এবার রাষ্ট্রপতি ভবনে নৈশভোজের আয়োজন হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়। গত বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের নৈশ ভোজ হয়েছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা তাতে অংশ নেননি। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে ইউনুসের বিদেশ যাত্রার সিদ্ধান্তে অনেকেই বিস্মিত। এমন সিদ্ধান্ত নজিরবিহীন, বলছে ওয়াকিবহাল মহল।
গত জানুয়ারিতে বেজিং সফরে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন (Touhid Hossain) চারদিনের সফরে যান তিনি। তার আগে ঢাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন কথা দেন, তাঁরা বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের উপর সুদের হার কমিয়ে দেবেন। সেই সঙ্গে তিস্তা মহা পরিকল্পনা (Teesta mega project) রূপায়ণে চিন প্রযুক্তিগত এবং পুরো আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী বলেও জানান। চারদিনের সফরে তৌহিদ হোসেন চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং আইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। বেইজিং ছাড়াও বাণিজ্য শহর সাংহাইতে যান তিনি।
তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চারদিনের ওই সফরের অন্যতম কর্মসূচি প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন বেজিং সফরের খুঁটিনাটি নিয়ে কথা। ২০২৫ চিন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক পঞ্চাশ বছর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গঠনের পর চার বছর সদ্য গঠিত দেশটিকে স্বীকৃতি দেয়নি চিনের তৎকালীন নেতৃত্ব। পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের সখ্যের কারণেই বেজিং গোড়ায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে অনাগ্রহী ছিল।
সেই অতীত পেরিয়ে অনেক আগেই দু-দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পায়। শেখ হাসিনার সময়ে নয়া দিল্লি এবং বেজিং, দু-পক্ষের সঙ্গেই ঢাকার ঘনিষ্ঠতা অনন্য উচ্চতায় ওঠে। যদিও ভারত সরকার নানা সময়ে অনুযোগ করেছে মুক্তিযুদ্ধে অসহযোগিতা করা চিনকে হাসিনা সরকার বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে।
হাসিনার সময়ে বাংলাদেশে অবকাঠামোর উন্নয়নে বিপুল বিনিয়োগ করেছে চিন। পদ্মা সেতু, চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীতে আন্ডারপাশ তৈরিতেও চিন বিনিয়োগ করেছে।
বাংলাদেশের চাহিদা মতো ভারত তিস্তার জল না দেওয়ায় অনেক আগেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল চিন। বাংলাদেশ সরকার তিস্তা মহা পরিকল্পনা তৈরি করেছে যাতে বর্ষার জল ধরে রেখে তা দিয়েই বাংলাদেশের উত্তরপ্রান্তের জেলাগুলিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা যায়। চিন ওই প্রকল্পে অর্থ সাহায্য দিতে প্রস্তুত। যদিও ক্ষমতা হারানোর কিছুদিন আগে বেজিং সফর থেকে ফিরে হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডাকা হবে। তবে তিনি ভারতকে দিয়ে কাজটি করানোর পক্ষপাতী।
হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। মনে করা হচ্ছে, এই সুযোগে চিন মহম্মদ ইউনুস সরকারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে তৎপর। তারা জানিয়ে দিয়েছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনায় পুরো অর্থ ঢালতে আগ্রহী। মনে করা হচ্ছে ইউনুসকে বিমান পাঠিয়ে বেজিং নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে চিন অন্তর্বর্তী সরকারের মন কাড়তে চাইছে।