বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে (Sirajganj, Bangladesh) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) পৈতৃক ভিটে ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করেছে বলে জানাল বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটে।
শেষ আপডেট: 13 June 2025 07:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে (Sirajganj, Bangladesh) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) পৈতৃক ভিটে ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ইতিমধ্যে পদক্ষেপ করেছে বলে জানাল বাংলাদেশ সরকার। ওই ঘটনা দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, ঘটনাটি স্থানীয় বিবাদ থেকে হয়েছে। সরকার কবিগুরুর স্মৃতি রক্ষায় সচেতন ও সতর্ক আছে।
বিবৃতিতে 'জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা', কবির এই পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। অনেকেই মনে করছেন, এই পরিচয়ের অনুল্লেখ সচেতন সিদ্ধান্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আমার সোনার বাংলা....' জাতীয় সঙ্গীত বদলের দাবিতে ইসলামিক মৌলবাদী সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। বিকল্প জাতীয় সঙ্গীত প্রচার করে থাকে তারা।
সিরাজগঞ্জের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে চিঠি লিখেন বৃহস্পতিবার। ওই দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করেন তিনি। বাংলাদেশের সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের কথা বলেন তিনি।
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, "এই পৈতৃক ভিটেটি শুধুমাত্র একটি বাড়ি নয়, বরং উপমহাদেশের সৃষ্টিশীলতার এক বিরাট কেন্দ্র। এখানেই একাধিকবার এসেছেন কবি স্বয়ং। তাঁর অনেক অমর সৃষ্টি এই স্থানেই রচিত হয়েছে। এই বাড়ির সঙ্গে কবির সৃষ্টিশীলতার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।"
এই বর্বরোচিত ঘটনায় শুধু ঐতিহাসিক সম্পত্তি নয়, বাঙালির জাতীয় গর্ব ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপরও আঘাত এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, "এটি আমাদের অনুভূতির উপর, আমাদের অমূল্য ঐতিহ্যের উপর এবং আমাদের ইতিহাসের গর্বের উপর এক নিকৃষ্ট হামলা।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ করিয়ে দেন, কীভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বদেশী আন্দোলনের সময়ে বাংলা ভাগের বিরোধিতা করে তাঁর কণ্ঠ তুলেছিলেন। এই আঘাত গোটা বাঙালি সমাজের কাছে এক যন্ত্রণার বিষয় বলে মনে করেন তিনি।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, এই ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে যেন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জোরালোভাবে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য আন্তর্জাতিক স্তরে কড়া প্রতিবাদ জানানোর কথাও বলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "যদিও ইতিমধ্যেই অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তবুও কঠোর আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ অন্তত ভবিষ্যতে এরকম বর্বরোচিত হামলা রোধ করতে সহায়ক হবে।"
এদিকে হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র স্মৃতি বিজড়িত কাছারিবাড়িটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ প্রশাসন। তবে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগের অধিগৃহীত ওই বাড়িটিতে তার আগেই ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। বেশ কিছু মূল্যবান জিনিসপত্রের ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় কিছু মানুষ0 এই হামলার ঘটনায় যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্থান হল রবীন্দ্রনাথের পরিবারের কাছারিবাড়ি। ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত দোতলা বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন বহু মানুষ হাজির হন। মঙ্গলবার একটি পরিবারের সঙ্গে বাড়িটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মচারীদের বচসা থেকে হাতাহাতি, মারামারি হয়। আক্রান্ত দর্শনার্থীর পরিবার পরে দলবল নিয়ে এসে হামলা, ভাঙচুর করে।
বাড়িটি বর্তমানে রবীন্দ্র যাদুঘর হিসেবে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৯৪০ সালে শাহজাদপুরের জমিদারি কিনে নিলে কাছারি বাড়িটি ঠাকুর পরিবারের হস্তগত হয়। রবীন্দ্রনাথ বছরে এক-দু'বার সেখানে যেতেন। ১৯৬৯ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি বলে ঘোষণা করে।
মঙ্গলবার দুপুরের গোলমালকে কেন্দ্র করে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে বিক্ষোভ মিছিলটি কাছারিবাড়িতে ঢুকে পড়ে। তারাই বাড়িটির কাস্টোডিয়ানের অফিস, অডিটোরিয়ামের জানালা, দরজা ভাঙচুর করে।