শেষ আপডেট: 20th September 2024 20:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ভয়াবহ। স্থানীয়দের বক্তব্য, পার্বত্য এলাকার তিন জেলায় গৃহযুদ্ধ বেঁধেছে। বাসিন্দাদের দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। বিবদমান দুই শিবিরই অভিযোগ করছে, প্রশাসন মৃত ও আহতদের প্রকৃত সংখ্যা চেপে যাচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রেস উইং আইএসপিআর বা আন্ত বাহিনী জনসংযোগ দপ্তর লম্বা বিবৃতি দিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, তিন পার্বত্য জেলায় চলমান সংঘর্ষ বড় দাঙ্গার রূপ নিতে পারে। বিবৃতিতে সেখানকার ভয়াবহ পরিস্থিতির ছবিও তুলে ধরেছে সেনা সদর। জানা গিয়েছে, প্রাণ ভয়ে হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছাড়ছেন। অনেকেই ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্তে ভিড় জমিয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি বান্দারবনের মধ্যে প্রথম দুটিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট আছে। সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস। সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল শনিবার ঢাকা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে যাবেন বলে ঠিক আছে।
সংঘর্ষের ঘটনার সূত্রপাত গত বুধবার। খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গণ পিটুনিতে মৃত্যু হয় মহম্মদ মামুন নামে বছর তিরিশের এত তরুণের। ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে দীঘিনালা কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে স্থানীয় মানুষ। অভিযোগ সেই মিছিলের উপর পাহাড়িয়া বা আদিবাসীদের সশস্ত্র সংগঠন দীঘিনালার বোয়ালখালী বাজার এলাকায় আক্রমণ করে। জঙ্গি সংগঠন ইউপিডিএফের জঙ্গিরা ২০ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে বলে অভিযোগ। এই আক্রমণের প্রতিবাদে স্থায়ীন বাংলাভাষীরা বোয়ালখালী বাজারে বেশ কিছু দোকানে আগুন দেয়।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজমাধ্যমে উত্তেজনাকর পোস্ট ঘিরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। রাতে সেনা কনভয় আক্রান্ত হলে জওয়ানেরা পাল্টা গুলি ছোড়ে। তাতে তিনজন মারা যায়। গুলিবিদ্ধ হয় অসংখ্য মানুষ।
বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার প্রতিবাদে পাহাড়িয়া বা আদিবাসী মানুষ রাঙামাটি জেলা সদরে শুক্রবার বিকালে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিলে বাংলাভাষীরা তার উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা সদরে ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’–এর ব্যানারে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। রাঙামাটি জিমনেসিয়াম এলাকায় আয়োজিত সেই সভার উপর আটশো থেকে হাজার মানুষ পাল্টা মিছিল বের করলে দু-দলের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। স্থানীয় মসজিদ, ব্যাঙ্ক, পথচলতি গাড়ি, বাড়িতে হামলা, আগুন দেয় জনতা।
এর আগে রাঙামাটিতে বেলা ১১’টা থেকে ১’টা পর্যন্ত দু-পক্ষের তুমুল সংঘর্ষ চলে। তাতে একজন মারা যায়। মৃতের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে সে পাহাড়িয়া বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। সংঘর্ষে দু-পক্ষের মোট ৫৫ জন আহত হয়। বেশিরভাগের শরীরে গুলি লেগেছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গিয়েছে, বড় ঘটনাগুলি সংবাদমাধ্যমে খবর হলেও গোটা পার্বত্য এলাকায় সংঘর্ষের অনেকগুলি ঘটনা ঘটেছে।