শেষ আপডেট: 10th March 2025 15:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার (united nations highcommissioner for human rights) ভলকার তুর্কের (Volker Turk) দাবি নসাৎ করল বাংলাদেশ সেনা বাহিনী। গত সপ্তাহে বিবিসি ওয়াল্ড (BBC-World) তাঁর একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। সেখানে ভলকার তুর্ক বলেন, গত বছর জুলাই-অগাস্ট মাসের আন্দোলন দমনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh army) যে কঠোর পদক্ষেপ করেনি সেটা রাষ্ট্রসংঘের কৃতিত্ব। কারণ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার হিসাবে তিনি বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে বলেছিলেন তারা দমন-পীড়ন করলে রাষ্ট্রসংঘের শান্তি রক্ষী বাহিনীতে আর যোগদানের সুযোগ পাবে না।
ভলকার তুর্কের ওই বক্তব্যকে হাতিয়ার করে অনেকেই বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে সরব হন। তারা অভিযোগ করে, সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাত গুটিয়ে ছিল। আন্দোলনকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর করা সত্ত্বেও সেনা বাধা দেয়নি। ফলে আন্দোলনকারীরা অবাধে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করতে পেরেছে।
সোমবার বাংলাদেশ সেনা বাহিনী বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস থেকে তাদের কাছে কোনও সতর্কবার্তা পায়নি।
সেনার আন্ত:বাহিনী সদর দফতর (inter-services public relations- Bangladesh army) বিবৃতিতে বলেছে, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘হার্ডটক’ এ গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার, মি. ভলকার তুর্কের মন্তব্য নিয়ে একটি সংবাদ প্রচার করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মানবাধিকারের তাৎপর্য যথাযথভাবে মূল্যায়ন করে এবং যে কোনও গঠনমূলক সমালোচনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। তবে অধিকতর সঠিকতা ও স্বচ্ছতার উদ্দেশ্যে উক্ত মন্তব্যের কিছু বিষয়ে স্পষ্টিকরণ প্রয়োজন বলে মনে করে।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার থেকে এ বিষয়ক কোনও ইঙ্গিত কিংবা বার্তা সম্পর্কে অবগত নয়। যদি এ সংক্রান্ত কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়ে থাকে, তবে তা তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়ে থাকতে পারে, সেনাবাহিনীকে নয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতীয় নিরাপত্তা নির্দেশিকা অনুযায়ী কাজ করে এবং সর্বদা আইনের শাসন ও মানবাধিকার নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে, মি. ভলকার তুর্কের মন্তব্য কিছু মহলের মাধ্যমে ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, যা সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টি এবং এর পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিরপেক্ষতা ও সততার মহান ঐতিহ্য ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা জনগণের পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অতীতের ঘটনাপ্রবাহ, বিশেষত ১৯৯১ সালের গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রমাণ করে যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনও জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেনি।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের সময়ও সেনাবাহিনী জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং কোনও পক্ষপাত বা বাহ্যিক প্রভাব ছাড়াই জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। প্রসঙ্গত, বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এখানে উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অর্জিত আয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ শান্তিরক্ষীরা পেয়ে থাকেন এবং এর সিংহভাগ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, যার পরিমাণ গত ২৩ বছরে প্রায় ২৭০০০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করে এবং দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দায়িত্ব পালনে সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেনাবাহিনীর ভূমিকা সংক্রান্ত যেনকোনও বিষয়ে উদ্বেগ অথবা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হলে তা গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে ফলপ্রসুভাবে সমাধান করা সম্ভব বলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মনে করে।