শেষ আপডেট: 30th September 2024 10:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দু-মাস হতে চলল বাংলাদেশে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকাক গঠিত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা ফেরানো এবং জিনিসপত্রের দামে লাগাম দেওয়াই হবে সরকারের আশু কর্তব্য, দায়িত্ব নিয়েই ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। কিন্তু বন্ধ অফিসকাছারি খোলা এবং পরিবরহণ ব্যবস্থার সামান্য উন্নতি হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে কে সেই। চুরি-ছিনতাই-রাহাজানির স্বর্গরাজ্য ঢাকা-সহ দেশটির বড় বড় শহর।
রবিবার বিকালে ঢাকার অদূরে বাণিজ্য শহর গাজিপুরে সোনালি ব্যাঙ্কের কয়েকজন কর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনী আনসারের রক্ষীদের কুপিয়ে সাত লাখ টাকা ছিনতাই করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। দেশের পূর্বপ্রান্ত কক্স বাজারে জেল পালানো ডাকাত দলের হামলায় নিহত হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক কর্নেল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর জামিন পাওয়া ডাকাতরাই তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে বলে তদন্তে জানতে পারে পুলিশ। স্বভাবতই ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ সেনা সদস্যরা, মুখ পুড়েছে সরকারের। সূত্রের খবর, পুলিশ পুরোপরি কাজে না নামায় দেশ জুড়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বেড়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা নামার আগেই বেশিরভাগ মানুষ তাই ঘরমুখী। রাত আটটার মধ্য পথঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
পাশাপাশি রাজনৈতিক অশান্তি, বৈরিতার সুযোগ নিয়ে জাঁকিয়ে বসেছে নতুন এক ব্যবসা। পরিবার, ব্যবসা, চাকরি রক্ষায় আত্মগোপন করা আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই এলাকায় ফিরতে চাইছেন। জানা যাচ্ছে, এলাকায় ফেরার জন্য গুণতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কোনও কোনও নেতাকে কোটি টাকাও গুণতে হয়েছে। একইভাবে দেশ ছাড়তেও গুণতে হচ্ছে মোটা টাকা। কোটির উপর গুণতে হচ্ছে আওয়ামী লিগের বহু নেতা-কর্মীকে। সে দেশের পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট এক নতুন দালাল চক্র সীমান্ত এলাকায় হালে গজিয়ে উঠেছে। সারা বছর সীমান্তে চোরাকারবার, মানুষ পাড়াপাড়ের ব্যবসায় যুক্ত দালালদের পাশাপাশি নব্য চক্রও বিপুল টাকার ব্যবসা করছে রাজনৈতিক কারণে দেশ ছাড়তে চাওয়া লোকজনকে ব্ল্যাকমেল করে।
অনম্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরই আওয়ামী লিগের কয়েক শো নেতা-কর্মীর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে মামলা থাকায়। বিমানবন্দর, স্থল বন্দর দিয়ে দেশ ছাড়ার সময় তাদের আটকে দেয় বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ। মামলার বিরাম নেই। রোজই আওয়ামী লিগের শত শত কর্মীর বিরুদ্ধে খুন-সহ গুরুতর অপরাধে যুক্ত থাকার মামলা হচ্ছে। পুলিশে অভিযোগ হওয়া মাত্র ইমিগ্রেশন বিভাগকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে অভিযুক্তরা দেশ ছাড়তে না পারে।
এই অবস্থায় গ্রেফতারি এড়াতে বেআইনি পথে সীমান্ত পেরনো ছাড়া কোনও রাস্তা নেই। এই সুযোগে তৈরি হচ্ছে নয়া চক্র। বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, যার বিরুদ্ধে যত গুরুতর অভিযোগ তাকে গুণতে হচ্ছে তত বেশি টাকা। আওয়ামী লিগের বহু নেতা-কর্মী কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন।
ইতিমধ্যে সীমান্ত পেরতে গিয়ে স্থানীয় মানুষ ও পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেলে যেতে হয়েছে বহু লোককে। সেই তালিকায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, পুলিশ, সরকারি কর্তা এবং সাংবাদিকেরাও আছেন। আওয়ামী লিগের যুব শাখার এক সাবেক নেতা মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় পাহাড় থেকে পড়ে মারা যান। মেঘালয় পুলিশের ময়না তদন্তে জানা যায়, পাহাড় থেকে পড়ার আগেই তাঁকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার পর পাহাড় থেকে দেহ ভারতের ভূখণ্ডে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ তদন্তে জানতে পারে দালালের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে টাকার অঙ্ক নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়ায় খুন হতে হয় ওই আওয়ামী লিগ নেতাকে। জানা গিয়েছে, দালালরা এমন জাল বিস্তার করেছে যে তাদের এড়িয়ে কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলছে। মৃত্যুর মুখ থেকে কোনওরমে বেঁচে ফিরেছেন বিচারপতি ও দুই সাংবাদিক।
অন্যদিকে, এলাকায় ফিরতেও দিতে হচ্ছে মোটা টাকা। ঢাকার গাজিপুরের এক আওয়ামী নেতার গারমেন্টস কোম্পানি গণ অভ্যত্থানের পর থেকেই বন্ধ। সেখানে লুটপাট চালানো হয়। প্রায় দু-মাস বেতন না পেয়ে এখন শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। সেই আওয়ামী নেতা ঢাকায় আত্মগোপন করে ছিলেন। এলাকায় ফিরতে তাকে কোটি টাকার বেশি গুণতে হয়েছে। সেই সঙ্গে মুচলেকা দিতে হয়েছে, এলাকায় ফিরে রাজনীতি করা যাবে না। এলাকায় ফেরা বহু আওয়ামী এখন নেতা গৃহবন্দি। এই শর্ত আর মোটা টাকার বিনিময়ে ফিরতে হয়েছে তাদের।
টাকা দিয়ে এলাকায় ফেরা, দেশ ছাড়ার এই চক্র নিয়ে আঙুল উঠেছে বিএনপি ও জামাতের দিকে। তবে অভিযোগ মূলত খালেদা জিয়ার দলের বিরুদ্ধেই। গণ অভ্যুত্থানের পর থেকেই বিএনপি প্রবলভাবে প্রশাসনের সর্বস্তরে দখলদারী কায়েম করে। অনেক জায়গায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধেও তোলাবাজি, সিন্ডিকেট রাজ কায়েমের অভিযোগ উঠেছে। দলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনেকাংশে মেনে নিয়েছেন বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির। প্রকাশ্যেই তিনি কর্মী-সমর্থকদের বলেছেন, এই সব চলতে থাকলে বিএনপি-র দশা আওয়ামী লিগের মতো হবে। অর্থাৎ বিএনপি-কেও মানুষ ধাওয়া করবে বলে মহাসচিব সতর্ক করে দিয়েছেন। কয়েক জায়গায় তেমন ঘটনাও ঘটেছে।
ঘটনা হল, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অভ্যুত্থানের পর দাদাগিরি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেটরাজের বিরুদ্ধে পথে নামলেও দিন দশেক পরেই বসে গিয়েছেন। উল্টে ছাত্র নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধে এখন একই অভিযোগ উঠেছে।