আওয়ামী লিগের ঢাকার সদর দফতর ঘিরে রেখেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কর্মী ও সাধারণ জনতা
শেষ আপডেট: 10th November 2024 10:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আওয়ামী লিগের রবিবারের সভা ঘিরে শনিবার রাত থেকেই ঢাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লিগের যে ময়দানে সভা করার কথা সেই শহিদ নূর হোসেন চত্ত্বর শনিবার রাতেই দখল নিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা কর্মীরা। দুপুর বারোটায় সেখানে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সমাবেশ করবে তারা। বিকাল তিনটায় সেখানেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সমাবেশ করার কথা আওয়ামী লিগের। ছাত্ররা মাঠের দখল ছাড়বে না বলে জানিয়েছে।
৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা গদিচ্যুত হওয়ার পর রবিবারই আওয়ামী লিগ প্রথম পথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঢাকা সহ গোটা বাংলাদেশে তাদের সমাবেশ করার কথা। পুলিশ ও সরকারি লোকজনকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে সমাবেশে আসতে হবে সে ব্যাপারে দলের তরফে ফেসবুকে বিস্তারিত গাইড লাইন দেওয়া হয়।
এরই মধ্যে শেখ হাসিনার আরও একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। সেটি আওয়ামী লিগ নেত্রীর কণ্ঠস্বর কিনা নিশ্চিত করেনি 'দ্য ওয়াল'। তাতে শেখ হাসিনা দলের এক নেতাকে বলেন, 'নূর হোসেন দিবস যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করতে হবে। মিছিলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু ছবিও যেন থাকে। মিছিলে বাধা দিলে, হামলা হলে সেই ঘটনার ছবি, ভিডিও আমাকে পাঠালে আমি ট্রাম্পের কাছে পাঠিয়ে দেব। আমার সঙ্গে ট্রাম্পের যোগাযোগ আছে।' হাসিনা আরও বলেন, কমলা হ্যারিস হেরে যাওয়ায় ইউনুস চাপে আছে। খুব বেশি বাড়াবাড়ি করার সাহস পাবে না। কর্মীরা যেন নির্ভয়ে সভায় আসে।'
কিন্তু শনিবার রাতেই ছাত্রদের পাশাপাশি পুলিশ ও সেনা শহিদ নূর হোসেন চত্ত্বরের দখল নিয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং দেহ তল্লাশি করছে যৌথ বাহিনী। মোবাইল নিয়ে দেখা হচ্ছে আওয়ামী লিগের সমর্থক কিনা। অন্যদিকে, আওয়ামী লিগ তাদের কর্মসূচি বাতিল করেনি। তারাও সভা করতে অবিচল।
শনিবারই প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে জানিয়েছিলেন ‘আওয়ামী লিগ বর্তমানে একটি ফ্যাসিস্ট শক্তি। ফ্যাসিবাদী দলটিকে বাংলাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। গণহত্যাকারী, স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনার নির্দেশে কেউ কোথাও মিটিং-মিছিল করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার কোনও ধরনের সহিংসতা এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি লঙ্ঘনের চেষ্টা মেনে নেবে না।’
যদিও সমাবেশ নিষিদ্ধ করার কোনও ঘোষণা করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নীরব। মুখ খোলেননি ইউনুসও। নীরব পুলিশ ও সেনা কর্তৃপক্ষ। ফলে ঢাকা এবং অন্য শহরগুলিতে কী হয় কী হয় পরিস্থিতি। বড় ধরনের গোলমালের আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট সব মহল।
আওয়ামী লিগ ১৯৯০ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেন দিবস পালন করে আসছে। গত শতকের নয়ের দশকে সেনা শাসক হুসেইন মহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হন নূর হোসেন। তিনি পেশায় ছিলেন গাড়ি চালক।
এবার সেই দিনে গোটা দেশে ইউনিয়ন পরিষদ স্তর পর্যন্ত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে আন্দোলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল আওয়ামী লিগ। ফেসবুকেই এই কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। সেই মতো ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লিগের নেতা কর্মীরা নূর হোসেনের ছবি দিয়ে পোস্টার ব্যানার তৈরি করেছে। অনেক জায়গায় সেগুলি সরিয়ে দেয় ছাত্র নেতৃত্ব এবং পুলিশ।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগেই আওয়ামী লিগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছিল। দলের সংগঠন ছাত্র লিগকে দু সপ্তাহ আগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ইউনুস সরকার। আওয়ামী লিগকে এখনই নিষিদ্ধ করার পথে না হাঁটলেও ছাত্ররা দাবি ছিল যতদিন না পর্যন্ত হাসিনার দলের স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া যাবে না। আওয়ামী লিগের রবিবারের কর্মসূচিতে অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউনুস সরকার ছাত্রদের দাবিতেই সিলমোহর দিল বলা চলে।