শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা। গ্রাফিক্স- শুভম সেনগুপ্ত।
শেষ আপডেট: 5th February 2025 23:34
অমল সরকার
বাংলাদেশে বুধবার রাতের ঘটনাবলীকে জঙ্গি হামলা বলল শেখ হাসিনার পার্টি আওয়ামী লিগ। বুধবার রাতে হাসিনা যখন ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন (sheikh hasina live) সেই সময় ঢাকার ধানমণ্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে আগুন দিয়ে ভাঙা শুরু হয়। একই সময় খুলনায় হাসিনার কাকার বাড়ি শেখ ভবন বুলডোজারের আঘাতে গুঁড়িয়ে দেয় উম্মত্ত জনতা। ‘বিপ্লবী জনতা’ নামে একটি সংগঠন বিকালেই হামলার ডাক দিয়েছিল। রাতে খবর আসে দেশের আরও কয়েকটি জায়গায় হামলা হয়েছে। আক্রমণ করা হয় আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীদের উপরও। আওয়ামী লিগ ঘটনার নিন্দা করে দেশবাসীকে প্রতিবাদে শামিল হতে আহ্বান জানিয়েছে। দলের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে মহম্মদ ইউনুসের সরকার।
আওয়ামী লিগ রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, গত বছরের ৫ অগাস্ট মেটিক্যুলাস ডিজাইনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নির্বাচিত সরকারকে হটানো হয়। তারই ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের সকল স্মৃতিচিহ্ন গুড়িয়ে দেওয়ার অংশ হিসাবে তাঁর স্মৃতি-বিজড়িত ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর পরও ভাঙার ক্ষত চিহ্ন এবং পোড়া দাগ নিয়ে জনশূন্য একটি প্রতীকি কাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল বাড়িটি। কিছুদিন যেতে না যেতেই অপরিমেয় প্রাণ শক্তি নিয়ে পুড়ে যাওয়া গাছগুলো কচি পাতার জন্ম দেয়। যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষের কাছে ছাই ভস্ম থেকে পুনরুত্থানের অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
হাসিনার দল বলেছে, বাঙালি জাতির অবিভাজ্য এই চেতনা শক্তি ও অনুভূতিকে ভয় পেতে থাকে অবৈধ এবং অসাংবিধানিক দখলদার খুনি ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার। ফলে তারা প্রতিনিয়ত মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লিগ এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের প্রতি কুৎসা রটায় ও ঘৃণা উৎপাদন করে চলে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে সেই সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বুধবার ফের বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন এবং তার সা্মনে থাকা জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ভাঙচুর চালায় স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। এটি সুস্পষ্টভাবে একটি ফৌজদারি অপরাধ। কিন্তু এটার জন্য আজকের বিচারহীনতার বাংলাদেশে বিচার প্রাপ্তির জায়গা নেই। আমরা চাই, জনগণের অনুভূতি জাগরণের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে উঠুক।
আওয়ামী লিগ বলেছে, বত্রিশ নম্বরের বাড়িটি নিয়ে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে যে অনুভূতি তা অধিক ক্রিয়াশীল। সেই অনুভূতিকে নস্যাৎ করে সেই সাধ্য কার? হয়তো এর জেরেই কোনো একদিন বত্রিশ নম্বরের এই বাড়িটি অধিক শৌর্যবীর্য নিয়ে পুনঃনির্মিত হবে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এ হেন ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং আমরা এটার ক্রীড়নক ও কুশীলবদের শাস্তির আওতায় আনার প্রত্যয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই অবৈধ, অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক সরকার বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সর্বোপরি জনগণের প্রতি কোনো প্রকার দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করছে না। তারা সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে একটা গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং তার দায়ভার খুনি ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকারকে নিতে হবে। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সমগ্র দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাবো আমাদের প্রিয় স্বদেশ ও মাতৃভূমিকে রক্ষায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসুন এবং দেশবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
আওয়ামী লিগ বলেছে, অবৈধ দখলদার খুনি ফ্যাসিস্ট ইউনুস সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে দেশবিরোধী অপশক্তির জঙ্গি সন্ত্রাসী ও গুণ্ডাবাহিনীর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এই মুহূর্ত থেকে দেশব্যাপী লাগাতার প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো যাচ্ছে।