শেষ আপডেট: 8th April 2025 08:41
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে (Bangladesh) ফিরে এল ভয়াবহ ‘৫ অগাস্ট’। ২০২৪-এর এই দিনে শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতনের পর দেশ জুড়ে শুরু হয়েছিল ভাঙচুর, হামলা, লুটতরাজ। অফিসকাছারি, দোকান-বাজারে লুটপাটের পাশাপাশি হোটেল, রেঁস্তরার খাবার খাওয়া, কিছুই বাদ ছিল।
গাজার উপর (protest against attack on Gaza) ইজরায়েলি হামলার প্রতিবাদের নামে সেই লটুপাট, ভাঙচুর, খাবার লুট করে খাওয়ার ‘৫ অগাস্টের পুনরাবৃত্তি হল বাংলাদেশে। ঢাকা (Dhaka), চট্টগ্রাম (Chattagram), কুমিল্লা (Komilla), রাজশাহীর (Rajshahi) মতো একাধিক শহরে এই সব হামলাবাজির ঘটনা ঘটেছে দিনভর। সিলেটে কেএফসির (KFC) বিপণীতে ঢুকে ভাঙচুরের আগে সেখানকার খাবার লুট করে প্রতিবাদকারীরা। দেখা যায়, দু-হাত ভরে চিকেনের নানা পদ নিয়ে বেরিয়ে আসছেন বিক্ষোভকারীরা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে উল্লাশ করতে করতে খাবার খায় তারা।
হামলা চলে বাটার (BATA) দোকানেও। দোকানের যাবতীয় জুতো নিয়ে গেছে বিক্ষোভকারীরা। ঘটনার সময় অদূরেই ছিল পুলিশ ও সেনা। তারা হামলা আটকাতে অগ্রসহ হয়নি। তারা জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ নেই। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে হামলা, লুটপাট চলার পর পুলিশ ও সেনা অ্যাকশনে নামে।
হামলাকারীরা নিজেদের তৌহিদি জনতা বলে পরিচয় দেয়। আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী এই গোষ্ঠী সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়েছে। ঢাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতেও এরাই হামলা চালায়। একাধিক সুত্র বলেছে, তৌহিদি জনতার মধ্যে একাধিক উগ্রবাসী মুসলিম সংগঠন ছাড়াও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা আছে। আর সেই কারণেই হামলা চলাকালে পুলিশ-সেনা হাত গুটিয়ে থাকে।
সোমবার গোটা দিনই উৎকণ্ঠায় কেটেছে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি, বিশেষ করে মার্কিন ও ইউরোপিয় নাগরিকদের। প্যালেস্তাইনের উপর ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল একাধিক সংগঠন।
হামলার আশঙ্কায় ঢাকার মার্কিন দূতাবাসকে সারাদিন মানব প্রাচীর গড়ে ঘিরে রাখে পুলিশ ও সেনা বাহিনীকে। দূতাবাসের সামনে চলে বিক্ষোভ আন্দোলন। মার্কিন নাগরিকদের উপর হামলার আশঙ্কায় সকালেই তাদের উদ্দেশে পরামর্শ জারি করে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস। বাংলাদেশে থাকা মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে বলা হয়, সাবধানে চলাফেরা করতে। এমন নির্দেশ শেষবার জারি করা হয়েছিল গত বছর গণঅভ্যুত্থানের সময়।
ঘটনাচক্রে সোমবার থেকেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছে চারদিনের বিনিয়োগ সম্মেলন। ২৫টি দেশের ৬০ জন বিনিয়োগকারী এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আছেন। সোমবার তাঁরা চট্টগ্রামে মুক্ত বাণিজ্য এলাকা পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলে চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা-সহ ইউরোপের বহু দেশের বিনিয়োগকারীরা আছেন।
বিনিয়োগ সম্মেলন শুরুর দিনে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। সোমবারের ঘটনা ‘ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমরা বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করেছি। এই সময় এমন ন্যাক্কারজনক দৃষ্টান্ত আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনেকগুলি স্থানীয় বিনিয়োগকারী। কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী আছেন, যারা বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রাখতেন। তারা সবাই আমাদের তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতেন।
বিডার চেয়ারম্যান তীব্র প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পর রাতে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের অফিস থেকে বলা, হামলাবাজদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান বাহারুল আলম জানান, পুলিশের কাছে হামলাবাজদের ভিডিও ফুটেজ আছে। প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হবে।