Advertisement
Advertisement
শেষ আপডেট: 19 April 2025 18:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে (Bangladesh) বৃহস্পতিবার থেকে ফের আওয়ামী লিগের (Awami League) নেতা-কর্মীদের গণ গ্রেফতার শুরু করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে আওয়ামী লিগ, যুবলিগ, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলিগ এবং শ্রমিক ও কৃষক লিগের নেতা-কর্মীরা আছেন। দলীয় সুত্রের খবর গ্রেফতারের সংখ্যা কয়েকশো।
সপ্তাহখানেক হল, শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) দল তীব্র আন্দোলন শুরু করেছে। ঢাকা-সহ দেশের বড় শহরগুলিতে দল মিটিং-মিছিল করেছে। গ্রেফতারের ভয়ে বেশিরভাগ জায়গায় ঝটিকা মিছিল হয়। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, মিছিলে দিন দিন ভিড় বাড়ছে। আওয়ামী লিগের নেতা-কর্মীরা ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। পথচলতি মানুষও সাবেক শাসক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচির প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সেই কারণেই আক্রমণ তীব্র করা হয়েছে।
সমাজমাধ্যমনে ছড়িয়ে পড়া মিছিলের ছবি দেখে অংশগ্রহণকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আওয়ামী লিগের দাবি তারপরও মিছিলের তীব্রতা কমেনি। দলীয় সুত্রে খবর, দলনেত্রী শেখ হাসিনা গণ-গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা করেছেন। শনিবার দলের কৃষক লিগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে হাসিনা দেশের কৃষক সমাজের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন।
আওয়ামী লিগ বলেছে, সংস্কারের নামে চলছে র্যাব-পুলিশের বেআইনি আগ্রাসন। অবৈধ সরকারের নির্দেশে বিভিন্ন জেলায় মামলা ও মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে আটক অভিযান চলছে। দল জানিয়েছে, ঢাকায় মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লিগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ শাহে আলম মুরাদ, রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লিগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলি, সিলেট দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ন আহবায়ক মহম্মদ আইয়ুব হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথা ছাতক পৌর আওয়ামী লিগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শ্রমিক নেতা আব্দুল কুদ্দুস, রাজশাহীর হুজুরীপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লিগের সভাপতি লুৎফার রহমান, পিরোজপুরে কৃষক লিগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান চান মিয়া মাঝিকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার করা হয়েছে, গাজীপুর কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লিগের সভাপতি সৈয়দ মুজিবুর রহমান, বদলগাছী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ জাহিদ হোসেন, মির্জাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জুয়েল সিকাদার, কাদরা ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়াকেও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়।
আওয়ামী লিগ এক বিবৃতিতে বলেছে, অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার একদিকে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এবং অন্যদিকে তাদের প্রত্যক্ষ মদদে মব সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীদের উপর যে নজিরবিহীন ও অকথ্য জুলুম, অত্যাচার ও নির্যাতন চালাচ্ছে আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের পক্ষ থেকে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এই সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে সন্ত্রাসে রূপান্তরিত করেছে। এর প্রভাবে আমাদের সামাজিক ঐক্য ও পারস্পরিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে। দেশের জনগণ সার্বিকভাবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এমতাবস্থায়, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিরাপত্তাহীনদের মধ্যে আরও নিরাপত্তাহীন। ফ্যাসিস্ট ইউনূস সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীদের চরমভাবে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। আর এই অবৈধ সরকারের অবৈধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গ্যাং লিডারের মতো কথা বলছে। পুলিশ যেন তার অধীনে থাকা ব্যক্তিগত বাহিনী, যাদেরকে তিনি সন্ত্রাস কাজ করার জন্য নিয়মিত নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের পাশাপাশি অবর্ণনীয় মবসন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির শিকার। জীবন ও সম্পদ হরণের ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে নির্বিচারে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এই অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীদের রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত করছে। যেন তারা নিজভূমে পরবাসী।
রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন, মিটিং-মিছিল করা যে কোনো দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক অধিকার। বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীরা জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই, তারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দানবীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীরা কোনও সহিংস বা সন্ত্রাসী পন্থায় এই বিরোধিতা করে না। তার শুধু মিছিল, মিটিং ও সমাবেশের মাধ্যমে দলের নীতি, আদর্শ ও কর্মপন্থার কথা জনগণকে জানাতে চায়। অথচ তাতেই এই অবৈধ সরকারের মসনদ কেঁপে ওঠে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করলেই তাদের নৈতিক অবস্থান টলটলায়মান হয়ে যায়।
হাসিনার দলের বক্তব্য, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিটিং-মিছিল করার পর সরকার অন্যায়ভাবে তাদের অনেককে গ্রেফতার করেছে এবং বিনা বিচারে আটক রাখছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরাসহ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লিগের নেতাকর্মীরা মিছিল করার পর থেকে বাছ-বিচারহীনভাবে ধরপাকড় করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি এবং একই সাথে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লিগের পক্ষ থেকে এহেন দমন-পীড়নমূলক পন্থার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সাথে এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
Advertisement
Advertisement