শেষ আপডেট: 26th August 2024 11:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে জড়ায় সে দেশের আধা সামারিক বাহিনী আনসার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলের সমর্থকেরা। রবিবার রাতের সংঘর্ষে আহত ৪০ জনের মধ্যে আছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহও। ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দেলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গলায় গলায় বন্ধুত্বের নানা দৃষ্টান্ত নজরে এসেছে। রবিবার রাতের ঘটনায় তাতে ছন্দপতন ঘটল বলা চলে। অনেকেই রবিবারের ঘটনাকে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অশনি সংকেত মনে করছেন। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনের আঘাত গুরুতর।
ঘটনার সূত্রপাত ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ে। রবিবার দুপুরে সেখানে কয়েকশো আনসার সদস্য ঢুকে স্লোগান দিতে শুরু করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, বৈষম্যের অবসান চেয়ে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। বিগত জমানায় আনসার বাহিনী সবচেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার। এর অবসান চাই। তাঁরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানান। তাঁরা আরও দাবি করেন, প্রতি তিন বছর পর তাঁদের ছয় মাসের জন্য চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যবস্থার অবিলম্বে অবসান দরকার।
তাঁরা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের উদ্দেশ্য করেও স্লোগান দেন। বাহিনীর সদস্যরা দাবি করেন, হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালে আনসার বাহিনী কোথাও নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করেনি। তারা আকাশে গুলি ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেছে। গুলি করে মানুষ মেরেছে পুলিশ। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তারা এখন অভিযুক্ত পুলিশ কর্তাদের ঘেরাটোপে দিন কাটাচ্ছেন।
আনসার সদস্যদের এই বক্তব্য নিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকারীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছিল। অস্বস্তিতে পড়েন সমন্বয়কেরাও। সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনা বাহিনী আনসার সদস্যদের আটকে দিলে গোলমাল বাধে। সচিবালয় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সমস্ত গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। অফিসে আটকে পড়েন উপদেষ্টা এবং আমলা-কর্মচারীরা।
পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী কয়েকজন আনসার সদস্যকে ডেকে আলোচনায় বসেন। বৈঠকে ছাত্র উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঠিক হয়, ছয় মাস কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থার অবিলম্বে অবসান হবে। বাকি দাবিদাওয়া সমাধানের জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ সচিবালয় ছেড়ে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
কিন্তু তিন সমন্বয়ক নাহিদ, সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহ সচিবালয়ে ছিলেন। আনসার সদস্যরাও সচিবালয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হস্টেলে রটে যায় আনসার বাহিনী সমন্বয়কদের সচিবালয়ে আটকে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা তাঁদের উদ্ধার করতে সচিবালয় ঘেরাও করলে আনসার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।
রাত দশটা পর্যন্ত দু-পক্ষের সংঘর্ষের পর সেনা বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। উপদেষ্টাদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা হয়। সংঘর্ষে আহত উপদেষ্টা হাসনাত আবদুল্লাহকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদদাতা আসিফ হাওলাদারও আহত হন।