বাঁদিকে পর্দার, ডানদিকে বাস্তবের 'বাকের ভাই' আসাদুজ্জামান নূর
শেষ আপডেট: 16th September 2024 13:26
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা তথা বহির্বিশ্বে দেশের অভিনয় শিল্পের মুখ আসাদুজ্জামান নূরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। রবিবার গভীর রাতে তাঁর ঢাকার বেইলি রোডের নওরতন কলোনীর বাড়ি থেকে ৭৭ বছরের প্রবীণ এই অভিনেতাকে পুলিশ একটি খুনের মামলায় গ্রেফতার করেছে।
এই খবর জেনে সে দেশে অনেকেই বিস্মিত। এফআইআরে বলা হয়েছে, গণ অভ্যুত্থানের সময় নূর বন্দুক হাতে ছাত্র-জনতার মোকাবিলায় পথে নেমেছিলেন। এই অভিযোগে ঢাকার মীরপুর থানায় মামলা হয়।
দিন পনেরো আগে অন্তবর্তী সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, খুনের মামলা হলেই গ্রেফতার করা যাবে না। আগে প্রাথমিক অনুসন্ধান করতে হবে। অথচ নূরের মতো জনপ্রিয় এবং প্রবীণ অভিনেতাকে গ্রেফতার করার আগে তাঁকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করেনি পুলিশ। ঘটনার দিন নূর দেশের উত্তরপ্রান্তে তাঁর সাবেক সংসদীয় এলাকা তথা পৈত্রিক বাড়ি নীলফামারিতে ছিলেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের দাবি।
ঘটনা হল আসাদুজ্জামান নূর গ্রেফতার হওয়ার খবর জানাজানি হতে বাংলাদেশের সমাজমাধ্যমে তিন দশক আগে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক টেলিভিশন নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’-এর টুকরো টুকরো অংশ ভাইরাল হতে শুরু করেছে। সে দেশের জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের রচনাকে ভিত্তি করে তৈরি ওই ধারাবাহিকের প্রধান এবং জনপ্রিয় চরিত্র ছিল ‘বাকের ভাই’।
বেকার, পরপোকারি, অন্যায় দেখলে প্রতিবাদে ঝাঁপিয়ে পড়া সেই তরুণ চরিত্র গোটা দেশে এমন আলোড়ন তৈরি করে যে কাহিনির শেষে একটি মিথ্যা খুনের মামলায় বাকের ভাইয়ের ফাঁসির আদেশ হলে মানুষ হুমায়ুন আহমেদের বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল। তারা দাবি করেন, কাহিনি বদলাতে হবে। বাকের ভাই-কে ফাঁসি দেওয়া যাবে না। দেশ ও সমাজ বদলের স্বার্থে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
পরিস্থিতি এমন হয় যে পুলিশের পরামর্শে হুমায়ুন আহমেদকে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকতে হয়। কারণ, তিনি কাহিনি বদলাতে রাজি হননি। ফাঁসির দৃশ্য প্রচারের দিন হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন ঘিরে রেখে বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি সামাল দিতে মিলিটারি নামাতে হয়। অনেকে ওইদিন টিভি বন্ধ রাখেন।
সেই থেকে স্বনামধন্য এই অভিনেতা নূরকে অনেকে বাকের ভাই বলেও সম্মোধন করেন। অনেকেই বলছেন, পর্দার মতো বাস্তবের বাকের ভাই-ও খুনি নন। তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
টেলিভিশন নাটকের পাশাপাশি মঞ্চ এবং বড় পর্দাতেও সমানতালে অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জানান নূর। ৭৭ বছর বয়সি নূর একজন মুক্তিযোদ্ধা। শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর নীলফামারী-২ আসনের আওয়ামী লিগ সাংসদ নূরকে দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রী করেছিলেন। নূরকে নিয়ে আওয়ামী লিগের মোট ২৭ জন সাবেক এমপি, মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে—১২০টি।