শেষ আপডেট: 10th March 2025 14:16
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একের পর এক ধর্ষণের (Rape) অভিযোগ ঘিরে প্রতিবাদে পথে নেমেছে বাংলাদেশের মানুষ। আইন-শৃঙ্খলার (Law and order) চরম অবনতি হওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর (Jahandir Alam Choudhury) পদত্যাগের দাবি জোরালো হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) প্রশ্ন তুলেছেন নারীদের নিরাপত্তা দিতে না পারায় কেন সরে যাচ্ছেন না প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস (Md Yunus) । রবিবারও দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অনলাইন আলোচনায় বলেছেন, দেশটায় কি ধর্ষণের উৎসব শুরু হয়েছে! বাংলাদেশ তো এমন ছিল না।
হাসিনা মেয়েদের উপর চাপানো বিভিন্ন ফতোয়ার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, মেয়েদের হাটে-বাজারে, স্কুলে-কলেজে যেতে মানা করা হচ্ছে। ফুটবল খেলায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, ধর্ষণ-সহ নারী নির্যাতনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর আইন চালু করেছিলাম। সেগুলি প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
ধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরেই পড়শি দেশে প্রতিবাদ তৈরি হচ্ছিল। তা নয়া মাত্রা পেয়েছে মাগুরার ঘটনায়। সেখানে একটি শিশু ধর্ষণের পর গুরুতর অসুস্থ। গত চারদিন ধরে ভেন্টিলেশনে রয়েছে শিশুটি। জ্ঞান ফেরেনি।
ওই ঘটনায় ধৃতদের বরিবার দফায় দফায় চেষ্টা করেও আদালতে পেশ করা যায়নি জন-বিক্ষোভের কারণে। মাগুরা আদালত রবিবার সারাদিন ঘিরে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। মাঝরাতে আদালত চত্ত্বর ফাঁকা হলে বিচারক কোর্টে আসেন। ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এবং মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, গত দু-মাসের ঘটনা নজির বিহীন। দু মাসে ৯৬ নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তাদের অর্ধেক শিশু। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ধর্ষণ করা হয় ৩৯জনকে। তাদের মধ্যে ১৮জন গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধষণ-সহ যৌন নিপীড়নের পর হত্যা করা হয় দুই মহিলাকে।
ফেব্রুয়ারি মাসে ধর্ষিতা ৫৭ জনে মধ্যে ১৬ জন শিশু, ১৭ জন কিশোরী। গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৭জন। মার্চ মাসে এসে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ সুত্রের খবর ধর্ষণের অভিযোগে দিনে গড়ে ১২টি করে মামলা হচ্ছে। সামাজিক সংগঠনগুলি বলছে, দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণেই ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা মনে করছে, কেউ বাধা দেওয়ার নেই। ধর্ষণের পাশাপাশি বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি।
দেশের এই পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা (Rafiath Rashid Mithila) এবং নিলয় আলমগীর (Nilay Alamgir)। সামাজিক মাধ্যমে মিথিলা লিখেছেন, ‘ধর্ষণের শিকার ৮ বছর বয়সি কন্যা শিশু! কিন্তু এটি নতুন কোন ঘটনা নয়। এই অভাগা দেশে প্রতি বছর গড়ে ছ’শো থেকে হাজার খানেক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা মানে না বয়স, পোশাক, সামাজিক অবস্থান, ধর্ম, বর্ণ, জাত, পরিচয়। কখনও মানেনি, মানবেও না।’ অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, ‘কোনও রাজনৈতিক দল ক্ষমতার পালাবদলে কখনই শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেনি, এখনও করে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সূচকের কাছে, ধর্ষণের সূচক অত্যন্ত নগন্য। তাই পিতৃতান্ত্রিকতার পতাকার তলে নারী দিবসকে প্রহসন মনে হয়। ধর্ষকের মৃত্যু চাই! ধর্ষণের বিচার চাই।’
অভিনেতা নিলয় আলমগীর লিখেছেন, ‘ধর্ষক কারও ভাই না, কারও বাবা না, কারও সন্তান বা কারও স্বামী না। ধর্ষকের একটাই পরিচয়, সে ধর্ষক। ধর্ষকের একটাই শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া দরকার।’