শেষ আপডেট: 13th August 2024 22:47
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আগামী বৃহস্পতিবার ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯ তম মৃত্যু দিন। তাঁর কন্যা তথা দেশের পাঁচবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার এক বার্তায় বৃহস্পতিবার জাতির পিতার স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে শোক পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আর্জি জানিয়েছেন।
হাসিনা বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। গত ৫ অগাস্ট গণ অভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছাড়তে হয় তাঁকে। তিনি সরকার প্রধান থাকার সময় বাংলাদেশে ১৫ অগাস্ট শোক দিবস হিসাবে পালিত হত। থাকত জাতীয় ছুটি। দেশ জুড়ে শেখ মুজিবকে স্মরণ করা হত। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঢাকায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করেছিল সেনা বাহিনীর কতিপয় বিক্ষুব্ধ জওয়ান ও অফিসার।
এবার দিনটি সরকারিভাবে পালিত হবে কি না তা নিয়ে গত কয়েকদিন যাবৎ ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ব্যাপারে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। তবে বিএনপি-সহ একাধিক বিরোধী দল প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের সঙ্গে দেখা করে দাবি করেছে, সরকার যেন ১৫ অগাস্টের ছুটি বাতিল করে এবং শোক দিবস পালন না করা হয়। আওয়ালী লিগের ছাত্র সংগঠন ছাত্র লিগ এবং বাম সংগঠনগুলি বাদে বাংলাদেশের ৩৪টি ছাত্র সংগঠন একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত করেছে আগামী ১৫ অগাস্ট তারা শোক দিবস পালন করবে না। মহম্মদ ইউনুসের ভাবনায় কী আছে তা এখনও স্পষ্ট না হলেও সরকারিভাবে এবার দিনটি শোক দিবস হিসাবে পালনের সম্ভাবনা কম। ইউনুসের শপথ অনুষ্ঠানেও জাতির পিতার নাম উচ্চারিত হয়নি।
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা দেশবাসীর উদ্দেশে প্রেরিত বার্তায় বলেছেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা, ১৯৭৫ সালে ১৫ অগাস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা, আমার তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট শেখ জামাল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার ১০ বছর বয়সি ছোট ভাই শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমার একমাত্র কাকা মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকেও নির্মমভাবে হত্যা করে।
একই দিনে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সারনিয়াবাদ, তাঁর ১০ বছরের ছেলে আরিফ ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শহীদ সারনিয়াবাদ, ভাগ্নে রেন্টু সহ অন্যান্য অনেককে নির্মমভাবে ভাবে হত্যা করা হয়। এই শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
হাসিনা একই বার্তায় তিনি দেশ ছাড়ার আগে তাঁর বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের প্রতিও শোক জ্ঞাপন করেছেন। বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে নাশকতা, অগ্নি সন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমনকী অন্তঃসত্তা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লিগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁদের প্রতি শোক জ্ঞাপন এবং আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মত যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এই হত্যাকান্ড ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে ধানমণ্ডির বাড়িটির বিষয়ে উল্লেখ করেছেন আওয়ালী লিগ সভানেত্রী। তিনি লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিল স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ওই বাড়িতে গিয়েছেন। স্বাধীনতার স্মৃতিবহনকারী এই জাদুঘরটি।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সকল ব্যথা বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করেছি। তার শুভ ফল আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আজ তা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে।
আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যাঁর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি, আত্মপরিচয় পেয়েছি, পেয়েছি স্বাধীন দেশ। লাখো শহীদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।
সব শেষে দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ১৫ অগাস্ট ভাব গম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্প মাল্য অর্পণ করে সকলের আত্মার শান্তি কামনা করুন।