শেষ আপডেট: 29th November 2024 21:41
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশে লাগাতার সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের যে অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে ভারতের ঘরোয়া রাজনীতিও আন্দোলিত। নয়াদিল্লি যাতে এ ব্যাপারে সদর্থক পদক্ষেপ করে সে ব্যাপারে দাবি উঠেছে। তা ছাড়া ওপার বাংলায় হিন্দুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগকে সামনে রেখে এপার বাংলায় বিজেপি তথা গেরুয়া ব্রিগেড হই হই করে মাঠে নেমে পড়েছে। ভাবটা এমনই যে অত্যাচার বন্ধ না হলে নরেন্দ্র মোদী সরকার এসপার ওসপার করে ছাড়বে।
এখন কৌতূহলের বিষয় হল, ভারত কি সত্যিই এসপার ওসপার করতে পারে? ৭১ সালের মতো পরিস্থিতি কি আদৌ রয়েছে?
শুক্রবার নয়াদিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল এ ব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। তিনি পষ্টাপষ্টি বলেছেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। জয়ওয়াল এও জানিয়েছেন, কূটনৈতিক স্তরে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং ঢাকাকে বলা হয়েছে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ হল, বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র এও জানিয়েছেন যে, চলতি পরিস্থিতির জন্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে কোনও প্রভাব পড়বে না।
এ কথা এই কারণেই তাৎপর্যপূর্ণ যে, বহু নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যাপারে ভারতের সরবরাহের উপর নির্ভরশীল ঢাকা। যেমন, ডিম, পেঁয়াজ, বিদ্যুৎ, ওষুধ ইত্যাদি। অর্থাৎ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশকে ডিম, পেঁয়াজ, জল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়ার মতো হঠকারী কোনও সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি।
কূটনীতিকদের অনেকের মতে, পড়শি দেশের সঙ্গে এমন হঠকারী ব্যবহারের খেসারত আগে দিতে হয়েছে ভারতকে। ২০১৩ সালে নেপালের সঙ্গে আর্থিক অবরোধ শুরু করেছিল ভারত। সার দিয়ে ট্রাক আটকে ছিল সীমান্তে। তার ফলে যে ব্যাকল্যাশ হয়েছিল, তার স্মৃতি এখনও টাটকা। তা ছাড়া ভারতের সেই অবস্থান নেপালকে আরও বেশি করে চিনের মুখাপেক্ষী করে তোলে।
সুতরাং যাঁরা মনে করছেন, মোদী সরকার বাংলাদেশের ব্যাপারে আরও একটা সার্জিকাল স্ট্রাইকের মতো ঘটনা ঘটিয়ে বসবে, আপাতত তাঁরা হতাশ হতে পারেন।
তবে হ্যাঁ নয়াদিল্লি এ ব্যাপারে হাত গুটিয়েও বসে নেই। বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের আশ্রয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে হাসিনা বিবৃতিও দিয়েছেন। কূটনীতিকদের মতে, বাংলাদেশে অন্তর্বতী সরকারের কাছে এই বার্তাটাও অনেক। আওয়ামি লিগ কিন্তু বাংলাদেশে হারিয়ে যায়নি। বরং ফের মাথা তোলার চেষ্টা করছে।
তা ছাড়া সংখ্যালঘুদের উপর লাগাতার অত্যাচারের ঘটনা নিয়ে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির চেষ্টাও করতে পারে। তবে পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি মোদী বা বিজেপির জন্য প্রতিকূল নয়। কারণ, বাংলাদেশের ঘটনাকে সামনে রেখে এ দেশে তীব্র মেরুকরণের চেষ্টায় নেমে পড়েছে বিজেপি। সব মিলিয়ে হিসাবকষেই চলছে নয়াদিল্লি। কোনও তাড়াহুড়ো দেখাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে এদিন সংসদে পেশ করা বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বিবৃতিও অর্থবহ। জয়শঙ্কর বলেছেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের: জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক, বিশেষত সংখ্যালঘুদের জীবন ও স্বাধীনতা রক্ষার দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের ওপর বর্তায়।
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হিংসা, তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা এবং মন্দিরসহ ধর্মীয় স্থান আক্রমণের ঘটনা নিয়ে আমরা একাধিক প্রতিবেদন পেয়েছি। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করা হয়েছে।"
জয়শঙ্করের কথায়, ঢাকার একটি পূজামণ্ডপে হামলা এবং সাতক্ষীরার একটি মন্দিরে চুরির ঘটনা নিয়ে ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুর্গাপূজার সময় শান্তিপূর্ণ উদযাপন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। ভারত সরকারের স্পষ্ট বার্তা, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে। এই বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।