তেলঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডিতে ওষুধ কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৪২ জন নিহত। শ্রমিকরা ছিটকে পড়েন ১০০ মিটার দূরে। চলছে উদ্ধারকাজ।
তেলঙ্গানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
শেষ আপডেট: 1 July 2025 06:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সাংঘাতিক বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে তেলঙ্গানার সাঙ্গারেড্ডি জেলার পাসামাইলারাম শিল্পাঞ্চল। সোমবারের দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ৪২ জন, আহত ও নিখোঁজ বহু। সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামক ওষুধ প্রস্তুতকারী কারখানার এই ভয়াবহ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের তীব্রতায় শ্রমিকরা ছিটকে পড়েন প্রায় ১০০ মিটার দূরে।
জানা গেছে, বিস্ফোরণের ফলে কারখানার একটি গোটা ইউনিট ধসে পড়ে এবং আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের ভবনগুলোতেও। ঘটনাস্থল থেকে শুরু হয় উদ্ধারকাজ।
ঘটনার তীব্রতা বোঝাতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের ফলে কারখানার ছাদ সম্পূর্ণভাবে উড়ে যায় এবং কয়েকজন শ্রমিক আক্ষরিক অর্থেই আকাশে ভেসে গিয়ে প্রায় ১০০ মিটার দূরে গিয়ে পড়েন। অনেকে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
তেলঙ্গানার স্বাস্থ্য মন্ত্রী দামোদর রাজনারাসিমহা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় কারখানায় প্রায় ৯০ জন কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ওই সময় রিঅ্যাক্টরের খুব কাছাকাছি কাজ করছিলেন। মৃত ও আহতদের অধিকাংশই ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা রিযায়ী শ্রমিক বলে জানা গেছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে পাটাঞ্চেরু এলাকার বিধায়ক মহীপাল রেড্ডি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, "এই কোম্পানি সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ চালাচ্ছিল। অনেকেই আহত হয়েছেন, প্রাণও দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ প্রকৃত মৃতের সংখ্যা গোপন করছে।"
তেলঙ্গানা স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স অ্যান্ড ফায়ার সার্ভিসের ডিজি ওয়াই নাগি রেড্ডি বলেন, "আমরা এখনও জানি না ধ্বংসাবশেষের নীচে কতজন চাপা পড়ে আছেন। শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজের এয়ার হ্যান্ডলিং ও ড্রায়িংয়ের সময় এই বিস্ফোরণ ঘটে।"
বিস্ফোরণের পরেই চারদিকে ঘন কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে, আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের দমবন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়। ফলে স্থানীয় প্রশাসন আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে।
সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি বাণিজ্যিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "এই দুর্ঘটনা আমাদের হায়দরাবাদ প্ল্যান্টে ঘটেছে, যেখানে উৎপাদন ক্ষমতা ৬,০০০ এমটিপিএ। প্ল্যান্টটির উৎপাদন আগামী ৯০ দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। আমরা আমাদের কর্মীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।"
এই সংস্থার আরও দুটি ইউনিট রয়েছে গুজরাটে, যেখান থেকে বাকি ১৫,৭০০ এমটিপিএ উৎপাদন হয়। হায়দরাবাদের কারখানাটি ওষুধের উপাদান, খাদ্য উপাদান এবং প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির জন্য বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়।
ঘটনার পর পাসামাইলারাম শিল্পাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রবল আতঙ্ক। পরিবারের লোকজন আতঙ্কে ছুটে আসছেন খবর পেয়ে। কারখানার অভ্যন্তরে এখনও ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন এনডিআরএফ ও রাজ্য দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা।
এই ভয়াবহ ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ভারতে শিল্প নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল এবং নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কিভাবে ঝুঁকি নিয়ে চলছে উৎপাদন কার্যক্রম।