শেষ আপডেট: 16th January 2025 21:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: হিন্দুমতে মকর সংক্রান্তির পুণ্যলগ্নে পুণ্যস্নান করলে সব পাপ মুছে যায়। সেই লক্ষ্যেই প্রতিবছরের মতো এ বছরও প্রয়াগরাজের কুম্ভ মেলায় উপচে পড়েছে মানুষ ও সন্ন্যাসীদের ভিড়। মকর সংক্রান্তি চলে গেলেও কুম্ভ মেলার ছবিটা এতটুকু বদলায়নি। সেখানে নাগা সন্ন্যাসীদের মতোই মেলা প্রাঙ্গনে দেখতে পাওয়া যায় মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদেরও।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে পুরুষ নাগা সন্ন্যাসীদের নিয়ে একাধিক তথ্য পাওয়া গেলেও মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন নিয়ে অনেকেরই কোনও ধারণা নেই। তাঁরা কীভাবে জীবনযাপন করেন? সন্ন্যাসীদের থেকে তাঁদের জীবনযাত্রার মান ও ধরণ আলাদা কি না-এসব নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহল কম নয়। নাগা সন্ন্যাসিনীদের জীবনযাত্রার ধরণ সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। মূলত মহাকুম্ভ, কুম্ভ, পূর্ণকুম্ভের সময় মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদের দেখা যায়।
তবে নাগা সাধু হওয়া মুখের কথা নয়। পুরুষদের তুলনায় বিষয়টি তুলনামূলক সহজ হলেও মহিলাদের কাছে বিষয়টি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। পুরুষদের ক্ষেত্রে যা নিয়ম মেনে চলতে হয় জানা যায় মহিলাদের ক্ষেত্রে সেখানেও বদল রয়েছে।
মহিলা নাগা সাধু হতে গেলে যা মানতেই হবে
কোনও মহিলা যদি নাগা সন্ন্যাসিনী হতে চান, তাহলে প্রথমেই মহিলাকে ৬ থেকে ১২ বছর ব্রহ্মচর্য পালন করতে হবে। তা সফলভাবে কাটিয়ে উঠতে পারলেই সেই মহিলা নাগা সাধু হতে পারেন। এটাই সবচেয়ে প্রথমিক বিষয়।
ঈশ্বরের কাছে জীবন উৎসর্গ করা
পুরুষ হন বা মহিলা, নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন পুরোপুরি ঈশ্বরকে উৎসর্গ করতে হয়। তবে যে সব মহিলারা নাগা সন্ন্যাসী হতে চান গুরুর কাছে প্রমাণ করতে হয় তাঁদের কোনও পিছুটান নেই। প্রতি পদে পদে পরীক্ষা দেওয়ার পর একজন মহিলা নাগা সাধু হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।
জীবিত অবস্থায় পিন্ডদান
নাগা সাধু হতে চাওয়া মহিলাকে জীবিত অবস্থায় পিন্ডদান করতে হয়। কুম্ভ বা মহাকুম্ভের সময় গোপনে এই কাজ করা হয় বলে ধর্মীয় বিশ্বাস। পুরুষ নাগা সাধুরা লম্বা চুল, জটাও রাখেন অনেক। মহিলাদের ক্ষেত্রে পিন্ডদানের পর মাথা ন্যাড়া হতে হয়।
খাওয়াদাওয়া
মহিলা ও পুরুষ নাগা সাধুদের খাবারের তালিকা মোটের উপর সমান। ফল, বিভিন্ন গাছের শিকড়, বিভিন্ন গাছের পাতা, সব্জি ইত্যাদি খেয়ে বাঁচেন তাঁরা।
কুম্ভে কোথায় থাকেন?
মেলায় থাকার জন্য মহিলা ও পুরুষ সাধুদের জন্য আলাদা আখড়ার ব্যবস্থা থাকে। তবে মহিলারা পুরুষদের স্নানের পরই পুণ্যস্নানে যেতে পারেন।
কি নামে ডাকা হয়
আখড়ায় নাগা সাধ্বীদের অবধুতানি বা নাগিন নামে ডাকা হয়। তবে পুরুষ ও মহিলাদের পোশাকে পার্থক্য রয়েছে। মহিলা সাধুরা মূলত ‘গান্টি’ (ঢিলেঢালা গেরুয়া বসন) পোশাক পরেন। কপালে থাকে তিলক এবং গায়ে ছাই মেখে থাকেন তাঁরা।
জীবনযাত্রা
মহিলা নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন রহস্যে মোড়া। তাঁদের সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। এঁরা বছর ভর পাহাড়ে বা গুহায় সন্ন্যাস জীবন যাপন করেন।
সাধারণত কুম্ভ মেলা প্রতি ১২ বছর অন্তর অন্তর আসে। এটি হিন্দু সংস্কৃতিতে একটি বিরল উপলক্ষ হিসেবে চর্চিত। এই বছরটি আরও বিশেষ কারণ যেমন ১২ বছর পর হচ্ছে কুম্ভ মেলা, ঠিক তেমনিই ১৪৪ বছর পর হচ্ছে মহাকুম্ভ মেলা।
তবে শুধু মহাকুম্ভই নয়, নাগা সাধু, সন্ন্যাসী, অঘোরিদের কাছে সব কুম্ভই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে নিজের ব্রহ্মচারী দশার কঠোর ত্যাগের পরে নাগা সাধু হওয়ার যোগ তৈরি হয়। অঘোরিরাও বিশেষ যোগের সময় নানা ধরনের পুজো পাঠ, সাধনা করে থাকেন। বিশ্বাস, কুম্ভ মেলায় ৪৫ দিন ধরে কল্পবাসের পরে সাধনা করে পুণ্য লগ্নে গঙ্গায় মহাস্নান করলে মোক্ষ লাভ হয়। তাই দেশ-বিদেশ থেকে সকলে এসে ভিড় জমান এই কুম্ভ মেলায়।