শেষ আপডেট: 6th March 2025 13:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সুপ্রিম কোর্ট এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলা খারিজ করে দিয়েছে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তিনি বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৬ বছর ধরে এক মহিলার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। বিচারপতি বিক্রম নাথ ও সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ জানিয়েছে, শুধু বিয়ের প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলেই তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয় না। যদি স্পষ্ট প্রমাণ না থাকে যে, সম্পর্কের শুরু থেকেই অভিযুক্তের বিয়ের ইচ্ছে ছিল না, তাহলে এই অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।
আদালত আরও জানায়, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই সম্পর্ক স্বেচ্ছায় চলেছে। তাই এখানে জোর বা প্রতারণার কোনও জায়গা নেই। এমনকি প্রমাণও নেই। একজন পুরুষের বিরুদ্ধে মিথ্যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৬ বছরের দীর্ঘ সম্পর্কের থেকেও যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন ওই মহিলা। তবে এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সমস্ত ফৌজদারি কার্যক্রম খারিজ করে দিয়েছে।
'Live Law'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং সন্দীপ মেহতার বেঞ্চের মতে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা মানেই ধর্ষণ নয়, যদি প্রমাণিত না হয় যে সম্পর্কের শুরু থেকেই অভিযুক্তের বিয়ের ইচ্ছে ছিল না। বিচারপতিরা বলেন, '১৬ বছর ধরে অবিচ্ছিন্নভাবে এই সম্পর্ক চলেছে। ফলে এখন কোনওরকম যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে মেনে নেওয়া যাবে না।'
সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ওই মহিলা একজন উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত মহিলা হয়েও দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এমন সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন, অথচ কখনও কোনও সন্দেহ প্রকাশ করেননি। কেবল অভিযুক্ত অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করার পরেই তিনি অভিযোগ দায়ের করেন।
বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, 'সেই মহিলা একজন শিক্ষিত ও স্বনির্ভর প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা। তা সত্ত্বেও ১৬ বছর ধরে কোনও আপত্তি না জানিয়ে অভিযুক্তের দাবি মেনে চলেছেন, এটি বিশ্বাস করা কঠিন। কেবল অভিযুক্ত অন্য মহিলাকে বিয়ে করার পরই তিনি ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন।'
এই মামলার সূত্রপাত হয় ২০২২ সালে, যখন সেই মহিলা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে এফআইআর দায়ের করেন এবং সেই বছরই পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। অভিযোগকারিণীর দাবি, ২০০৬ সালে অভিযুক্ত চুপিসারে তাঁর বাড়িতে ঢুকে জোর করে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। অভিযুক্ত তাঁর আবেদনে জানান, অভিযোগকারিণী তাঁর সঙ্গে স্বেচ্ছায় ও সম্মতিসূচক দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে ছিলেন। তাদের সম্পর্কের অবনতি এবং অভিযুক্ত অন্য মহিলাকে বিয়ে করার পরেই এই মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
হাইকোর্টের রায় খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারিণীর মধ্যে ১৬ বছরের সম্পর্ক ছিল সম্পূর্ণ পারস্পরিক সম্মতিতে। শুধু তাই নয়, তাঁরা একসঙ্গে থাকতেন। বেঞ্চ জানায়, '১৬ বছর ধরে বারবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার পরেও শুধুমাত্র বিয়ের অপেক্ষা করেছেন—এই দাবি একেবারেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাঁর বক্তব্যে প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে এবং তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।'
বিচারপতিরা আরও জানান, '১৬ বছরের সম্পর্কের মধ্যে অভিযোগকারিণী নিজেকে বহুবার অভিযুক্তের স্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এই দীর্ঘ সময় ধরে তাঁরা স্বামী-স্ত্রীর মতোই একসঙ্গে থেকেছেন। এতদিন পরে এসে এফআইআর দায়ের করাটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।' এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সমস্ত ফৌজদারি কার্যক্রম বন্ধ করে জানায়, এই মামলা চালিয়ে যাওয়া আইনের অপব্যবহার ছাড়া আর কিছুই হবে না।