শেষ আপডেট: 3rd January 2025 20:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেরলের নার্স নিমিশা প্রিয়ার (Nimisha Priya) মৃত্যুদণ্ড (Nurse Deth Sentence) কার্যকর হতে চলেছে ইয়েমেনে। দীর্ঘ লড়াই ও আপ্রাণ চেষ্টার পরেও তার পরিবার এবং সমর্থকদের সব প্রচেষ্টা বিফল হয়েছে। ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রশদ আল-আলিমি ইতিমধ্যেই নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ডে সিলমোহর দিয়েছেন। আগামী এক মাসের মধ্যেই তার ফাঁসি হওয়ার সম্ভাবনা।
নিমিশার মা প্রেমা কুমারী মঙ্গলবার ইয়েমেন থেকে কাতর আর্জি জানিয়ে বলেন, ‘ভারত ও কেরল সরকার সবরকম সাহায্য করেছে, তা-ও শেষবারের মতো অনুরোধ করছি, কিছু করুন। ওকে বাঁচান। সময় ফুরিয়ে আসছে, দয়া করে ওকে বাঁচান। এটাই আমার শেষ আবেদন।’
নিমিশার স্বামী থমাস বলেন, ‘সকলেই চেষ্টা করছেন নিমিশাকে বাঁচাতে, সবাই সব যোগাযোগ কাজে লাগাচ্ছেন, আশা করছি মাহদির পরিবারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করতে পারব, ওরা ক্ষমা করবে নিমিশাকে। আমাদের মেয়েটার কথা অন্তত ভাববে।’
ইরানের প্রতিক্রিয়া
এই পরিস্থিতিতে এখনও ইয়েমেন কোনও সাড়া দেয়নি। তবে ইরানের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, প্রিয়া (Nimisha Priya) হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হলেও, মানবিকতার খাতিরে এই ঘটনাকে অন্যভাবে বিবেচনা করা উচিত। তাই ইরান এই ঘটনায় মানবিক সহযোগিতার জন্য যা যা সম্ভব করবে তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইরানের এই প্রতিক্রিয়া অবশ্য আন্তর্জাতিক মহল সাদা চোখে দেখছে না। কারণ সাম্প্রতিক ইরান-ইজরায়েল টানাপড়েনের মধ্যে ভারত এখনও ইজরায়েলের সমর্থক। নেতানিয়াহু এবং মোদীর 'বন্ধুত্ব' সর্বজনবিদিত। এই পরিস্থিতিতে নিমিশা প্রিয়ার ঘটনায় ইরান স্বেচ্ছায় ভারতের দিকে হাত বাড়ানো বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
ইয়েমেনে যদি শেষমেশ ফাঁসি না হয় নিমিশার, তাহলে পরোক্ষে ইরানের জয় হবে বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। বার্তা যাবে, ইরান ও ভারত বন্ধুরাষ্ট্র।
পালক্কড়ের বাসিন্দা এবং প্রশিক্ষিত নার্স নিমিশা ইয়েমেনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করতেন। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে তার স্বামী ও নাবালিকা মেয়ে ২০১৪ সালে দেশে ফিরে যান।
এর পরে তালাল আবদো মেহদির সাহায্যে ইয়েমেনে একটি ক্লিনিক খোলেন নিমিশা। তবে অভিযোগ, মেহদি ক্লিনিকের মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র নিজের নামে করে নেন। বিয়ের বিকৃত ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করা এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগও ওঠে মেহদির বিরুদ্ধে। এমনকি, তিনি নিমিশার পাসপোর্টও আটকে রাখেন।
২০১৭ সালে, জেলের ওয়ার্ডেনের পরামর্শে মেহদিকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান নিমিশা। কিন্তু, ওষুধের মাত্রা বেশি হয়ে যাওয়ায় মেহদির মৃত্যু হয়। এই খুনের অভিযোগেই দোষী সাব্যস্ত হন নিমিশা। এখন তিনি সানা জেলে আছেন।
নিমিশার পরিবার বহু কষ্ট করে টাকাপয়সা জোগাড় করে আইনজীবীর ফি দেওয়া থেকে শুরু করে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিল। ভারত সরকারও জানিয়েছে, এই মামলায় তারা পরিবারের পাশে থাকবে। ইয়েমেনের শরিয়ত আইন অনুযায়ী, কোনও অপরাধী ‘ব্লাড মানি’ (দিয়্যা) দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিতে পারলে মৃত্যুদণ্ড এড়ানোর সুযোগ পায়। অর্থাৎ, নিহতের পরিবারের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার মাধ্যমে অপরাধী ক্ষমা চাইতে পারে।
নিমিশার পরিবার ইতিমধ্যেই ৪০ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৩৪ লক্ষ টাকা) ‘ব্লাড মানি’ হিসেবে নিহতের পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু আরও ৪ লক্ষ মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এই অর্থ সংগ্রহ করতে পারলে নিমিশার প্রাণ রক্ষা সম্ভব হতে পারে।
ভারত সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, তারা নিমিশার পরিবারের পাশে রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুভাষ চন্দ্রন কেআর মনে করেন, ভারত সরকার ব্লাড মানি জোগাড় করতে আর্থিক সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, ইয়েমেনের আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার পথে এগোনোর সম্ভাবনা রয়েছে।
২০২০ সালে ‘সেভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন গঠিত হয়, যা ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে নিমিশার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রোধে ব্লাড মানির বিকল্প সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে। তবে এই বিপুল অর্থ সংগ্রহ করা, এবং নিহতের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানো এখনও বিশাল চ্যালেঞ্জ।