এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
শেষ আপডেট: 1st January 2025 13:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো: স্ত্রী ‘পর্দা’ (ঘোমটা বা বোরখা) না মানলে, তা মানসিক নির্যাতনের ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে না। একটি মামলায় এমনই রায় দিয়েছে এলাহাবাদ হাইকোর্ট (Allahabad Highcourt)।
উত্তরপ্রদেশের এক যুবক দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী যথেষ্ট রক্ষণশীল ভাবে দিন কাটান না। তিনি মুখ-মাথা না ঢেকেই ঘর থেকে বেরোন, যেখানে খুশি যান, একা ঘোরাফেরা করেন। এই বিষয়টি তাঁকে ‘মানসিক ভাবে নির্যাতন’ করছে বলে দাবি করে, বিবাহ বিচ্ছেন চেয়েছিলেন তিনি।
বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল সিং এবং ডোনাডি রমেশের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই মামলা শোনার পরে, স্বামীর নির্যাতিত হওয়ার দাবিকে নাকচ করে দিয়েছেন তাঁরা।
বিচারপতি সিংয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ তাঁদের রায়ে উল্লেখ করে, যেস্ত্রী একজন স্বাধীনচেতা ব্যক্তি। তাঁর নিজস্ব পরিচয় রয়েছে। বাজার বা অন্য কোথাও নিজের মতো ঘুরতে যাওয়া বা ‘পর্দা’ না মানা— এসব আচরণকে মানসিক নির্যাতন হিসেবে বিবেচনা করা যায় না কোনও মতেই।
রায়ে আরও বলা হয়, ‘স্ত্রী একজন স্বাধীন ইচ্ছার মানুষ এবং সমাজের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে বা নিজের মতো করে চলাফেরা করতে পারেন। যদি এসব আচরণের মধ্যে কোনও বেআইনি বা অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি না হয়, তাহলে এসবকে নির্যাতন বলা চলে না।’
বিচারকরা আরও উল্লেখ করেন যে, এক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী দু’জনেই শিক্ষিত এবং কর্মজীবী। স্বামী একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং স্ত্রী সরকারি স্কুল শিক্ষিকা। জীবনের প্রতি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে আচরণগত অমিল দেখা দিতে পারে। তবে এই পার্থক্য মানসিক নির্যাতনের ভিত্তি হতে পারে না, যতক্ষণ না তা আইনগতভাবে নির্ধারিত নির্যাতনের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে।
বিচারকরা স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর অপমানজনক আচরণের অভিযোগও খারিজ করে দেন। রায়ে উল্লেখ করা হয় যে, স্বামী এই ধরনের অভিযোগের সুনির্দিষ্ট সময় বা স্থানের বিবরণ দেননি এবং এসব অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়নি।
তবে এই মামলায় আদালত স্বামীর অন্য এক দাবিকে মেনে নিয়ে ডিভোর্স মঞ্জুর করেছে। স্ত্রী দীর্ঘ সময় ধরে স্বামীকে ছেড়ে রয়েছেন এবং সহবাসেও রাজি হননি বলে দাবি করা হয়েছে। আদালতের মতে, স্ত্রীর এই ইচ্ছাকৃত আচরণ এবং বৈবাহিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টার অভাব একটি গুরুতর সমস্যা, যা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে।
একথা বলে, বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করে, আদালত উল্লেখ করেছে যে, উভয়পক্ষই কর্মজীবী এবং তাদের একমাত্র সন্তান, যিনি স্ত্রীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন, এখন ২৯ বছর বয়সি। এই পরিস্থিতিতে খোরপোষের জন্য কোনও আবেদন করা হয়নি এবং তার প্রয়োজনও নেই।