শেষ আপডেট: 29th April 2024 16:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পশ্চিমবঙ্গে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ জ্বালিয়েপুড়িয়ে দিচ্ছে। খাস কলকাতা শহরেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ঝড়বৃষ্টির নামগন্ধই নেই। ওদিকে দেশের নানা রাজ্যে তাপপ্রবাহ চলছে। কেরলে প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহে একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে, অন্ধ্রপ্রদেশে এখনই তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, হিমালয়ের পাদদেশের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের থেকে বেশি রয়েছে এই মুহূর্তে।
কলকাতায় গরম এ বার অস্বাভাবিক। বৈশাখে গ্রীষ্মের সূচনা হওয়ার আগেই দহনজ্বালায় পুড়েছে বাংলা। রোদে বেরোলে জ্বালা করছে চোখ-নাক-মুখ। হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, কলকাতা এবং সংলগ্ন দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে রোজই পারদ চড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ। এমনকী উত্তরবঙ্গেও তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি হয়েছে। গরমকালে ঝড়বৃষ্টির জন্য বাতাসে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প প্রয়োজন। এ বার সেটা কম থাকায় শহরে ঝড়বৃষ্টি মিলছেই না। অন্য বছর এপ্রিলে যেখানে গড়ে ৩-৪টি কালবৈশাখী মেলে, সেখানে এ বছর অকাল-কালবৈশাখীতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তাতেও কমেনি তাপমাত্রার পারদ।
কেন এত গরম পড়ছে এ বছর তার পিছনে অনেক কারণ আছে।
আবহাওয়াবিদরা এর জন্য দায়ী করছেন বঙ্গোপসাগরে উচ্চচাপ বলয়ের অনুপস্থিতি ও দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকা নিম্নচাপ বলয়ের দুর্বলতাকে। সাগরের উপরে থাকা উচ্চচাপ বলয়ই কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের জোগান দেয়। তবে শুধু এই দু’টি কারণ নয়। আবহবিদদের একাংশ বলছেন, গরমের এই ভোলবদলে দায়ী ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে কাশ্মীর ও উত্তর ভারতে আছড়ে পড়া পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও।
এ বছর উত্তর ভারতে ঘন ঘন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আছড়ে পড়ছে। তার গতিপথেও কিছুটা বদল ঘটেছে। সাধারণত, পাহাড়ি এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝঞ্ঝা এ বার উত্তর ভারতের সমতলের দিকে নেমে এসেছে। যার প্রভাবে গুজরাত ও মধ্য ভারতে শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে। এই দু’য়েরই প্রভাব পড়ছে পূর্ব ভারতের আবহাওয়ায়।
শীতকালে সুদূর ভূমধ্যসাগরে নিম্নচাপযুক্ত ঝোড়ো হাওয়া তথা ঝঞ্ঝা তৈরি হয়। এই ঝোড়ো হাওয়া ক্রমশ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে এগিয়ে আসে। কাশ্মীর দিয়ে তা ভারতে ঢোকে এবং তার পরে মধ্য ভারত দিয়ে পূর্ব ভারতে বয়ে যায় কিংবা কখনও কখনও উত্তরাখণ্ড হয়ে নেপালের দিকে চলে যায়। এই ধরনের ঝঞ্ঝার প্রভাবে কাশ্মীরে, হিমাচল প্রদেশে তুষারপাত হয় এবং বৃষ্টি হয় উত্তর-পশ্চিম ভারতে। শীতকালে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত দুর্বল ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে হালকা বৃষ্টিপাত এবং পার্বত্য অঞ্চলে তুষারপাত হওয়ার ঘটনাকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বা পশ্চিমী ঝামেলা বলা হয়। এ বছর পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও খামখোলি ছিল।
উত্তর ভারতের কয়েকটি জায়গায় পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাব পড়লেও তা ছিল অনেকটাই কম। হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিমে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে ঠিকই, তবে তা ভারতে ঢুকে উত্তর-পশ্চিমে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। কাজেই তেমন বৃষ্টিও হয়নি তেমনভাবে।
আরও একটা কারণ হল, গরম হাওয়া খুব বেশিক্ষণ থমকে থাকছে পরিবেশে। আগে গরম ও শীতল হাওয়ার আদলবদল হত। গরম হাওয়া ওপরে উঠে গেলে তার জায়গা নিত শীতল হাওয়া। কিন্তু এখন, গরম হাওয়াই আটকে পড়ছে পরিবেশে। যে কারণে পরিবেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে। এর জন্য যত্রতত্র গাছ কাটা এবং বড় বড় বিল্ডিংগুলো দায়ী। পরিবেশ থেকে গরম হাওয়া বেরিয়ে যাওয়ার জায়গা চাই। তাকে চারদিক থেকে আটকে দিচ্ছে বড় বড় বাড়ি, ধাতব টাওয়ার, শপিং মল। এখন প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে তত বেশি ধাতুর ব্যবহার হচ্ছে। অ্যালুমিনিয়াম জাতীয় ধাতুর ব্যবহার এখন বেশি যা দীর্ঘ সময় তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে। ফলে পরিবেশ শীতল হওয়ার সময়ই পাচ্ছে না। গরম বাড়ছে।