সইফ আলি খান
শেষ আপডেট: 22nd January 2025 22:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ছোটে নবাব সইফ আলি খানের সময়টা বেশ খারাপই যাচ্ছে। ছুরির আঘাত শুকোতে না শুকোতেই বড় কোপ এসে পড়েছে নবাবের এস্টেটের উপর। কেন তাঁর হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ভূ-সম্পত্তি।
কিন্তু কেন এই কোপ? কেনই বা সইফের সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি বলে ঘোষণা করেছে সরকার?
তা জানতে ইতিহাসের পাতা ঘাঁটতে হবে। সইফ আলি খান ও তাঁর পরিবার হল ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খানের বংশধর। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এ দেশে 'এনিমি প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৬৮' তথা শত্রু সম্পত্তি আইন প্রনয়ণ হয়। এই আইন অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি পাকিস্তানে বা চিনে পাড়ি জমিয়েছেন, তাঁদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি 'শত্রু সম্পত্তি' হিসেবে গণ্য হবে।
নবাব হামিদুল্লাহ খান ১৯২৬ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ভোপালের শাসক ছিলেন। ১৯৪৯ সালে একটি 'অ্যাক্সেশন চুক্তি' স্বাক্ষর করে ভোপালকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করেন। ১৯৫৫ সালের রাজস্ব নথি অনুসারে, ভোপালের প্রশাসন ৫,৭৩৯ একর জমি নবাবের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর মধ্যে রয়েছে: ৮৩০ একর ফিরদৌস ফার্মস, ৩০৮৭ একর চিকলোড রিট্রিট, ৩৬ একর রিজওয়ান ফার্মস, শুটিং রেঞ্জ ও শুটিং গ্রাউন্ড।
নবাব হামিদুল্লাহ খানের ছিল তিন কন্যা—আবিদা সুলতান, সাজিদা সুলতান ও রাবিয়া সুলতান। তবে বড় মেয়ে আবিদা সুলতান বিয়ে করে পাকিস্তানে চলে গেলে নবাব বিপদে পড়েন। তখন বাধ্য হয়ে তাঁর মেজ মেয়ে সাজিদা সুলতানকে নবাবের উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সাজিদা ছিলেন সইফ আলি খানের দাদি।
সাজিদা সুলতান পাতৌদির নবাব ইফতিখার আলি খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯৫ সালে সাজিদার মৃত্যুর পর মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী তাঁর সম্পত্তি তাঁর তিন সন্তান—মানসুর আলি খান পাতৌদি, সেলেহা সুলতান ও সাবিহা সুলতানের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
মানসুর আলি খান পাতৌদি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি পরে তাঁর তিন সন্তান—সইফ আলি খান, সোহা আলি খান এবং সাবা আলি খানের মধ্যে ভাগ করে দেন। সইফ আলি খান এবং তাঁর পরিবারের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিগুলির মধ্যে রয়েছে—ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউস, নূর-উস-সাবাহ প্যালেস, ভোপালের ৫,৭৯৬ একর জমি, ভোপালের বাইরে আরও ১,৩৭০ একর জমি।
এ পর্যন্তও ঠিক ছিল। সমস্যা হয় এর পর। সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে আগে কমবেশি বিরোধ ছিলই, পরে তা জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়। ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, 'কাস্টোডিয়ান অফ এনিমি প্রপার্টি ইন ইন্ডিয়া' (CEPI) এক নোটিশ জারি করে। এতে বলা হয়, নবাব ও তাঁর পরিবার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিগুলো শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ নবাবের প্রথম উত্তরাধিকারী আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন।
এখানে জানিয়ে রাখা ভাল, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এ দেশে 'এনিমি প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৬৮' তথা শত্রু সম্পত্তি আইন প্রণীত হয়। এই আইন অনুযায়ী, যেসব ব্যক্তি পাকিস্তানে বা চীনে পাড়ি জমিয়েছেন, তাঁদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি 'শত্রু সম্পত্তি' হিসেবে গণ্য হবে।
ওই আইন মোতাবেকই ২০১৫ সালে নোটিস ইস্যু হয়। সেই সময়ে CEPI-এর কাস্টোডিয়ান ছিলেন উৎপল চক্রবর্তী। শত্রু সম্পত্তি হিসেবে নবাবের সম্পত্তি ঘোষণা করার পরে, CEPI রাজ্যের রাজস্ব বিভাগকে নির্দেশ দেয় যে কাস্টোডিয়ানের তত্ত্বাবধানে থাকা এই সম্পত্তিগুলো অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে এই আদেশে সম্পত্তির নির্দিষ্ট সংখ্যা বা পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।
২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি সইফ আলি খান ও তাঁর পরিবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে যুগ্ম সচিবের কাছে আপিল করেছন। সংশোধিত 'এনিমি প্রপার্টি (অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যান্ড ভ্যালিডেশন) অ্যাক্ট, ২০১৭'-এর আওতায় এই আপিল করা হয়। তা ছাড়া সইফ আলি খান ২০১৫ সালে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। তাঁর দাবি ছিল, এই পদক্ষেপ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে এবং আইনি ভিত্তি ছাড়াই নেওয়া হয়েছে। মামলার পিটিশনে উল্লেখ করা হয় যে, ১৯৬২ সালের একটি সরকারি সার্টিফিকেট সাজিদাকে নবাবের একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এতে বলা হয়, নবাব এবং তাঁর উত্তরসূরিরা সম্পত্তির পূর্ণ মালিকানা ভোগ করবেন। পিটিশনে আরও বলা হয়, CEPI 'এনিমি প্রপার্টি অ্যাক্ট'-এর ধারা ভঙ্গ করেছে, দ্রুত এবং ভুলভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু গত ১৩ ডিসেম্বরের রায়ে হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, সংশোধিত 'এনিমি প্রপার্টি অ্যাক্ট' নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সম্পত্তি হস্তান্তরের সুযোগ দেয়। তাই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ৩০ দিনের মধ্যে আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে। এখন এই আপিল কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপরই ছোটে নবাবের সম্পত্তির ভবিষ্যৎ ঝুলে রয়েছে।