১১ মে বিয়ের পর তাঁরা ২০ মে পৌঁছন গুয়াহাটি। সেখান থেকে যান মেঘালয়ে। তারপরই ২৩ মে খুন।
কামাখ্যায় রাজা
শেষ আপডেট: 12 June 2025 07:58
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একটি ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইট থেকে দেখাশোনা করে বিয়ে হয় সোনম-রাজার। কিছুদিন কথা হওয়ার পর পরিবারের মতে ও পুরোহিতের থেকে শুভ দিন ঠিক করে চার হাত এক হয়। রাজার মৃত্যুর পর একাধিক তথ্য সামনে আসছে। সোনম আপাতত পুলিশ হেফাজতে। জানা যাচ্ছে, নির্জন পাহাড়ি এলাকায় খুন করতে সুবিধা হবে বলে ইন্দোর থেকে মেঘালয় যাওয়ার প্ল্যান করেন সোনম। যুক্তি সাপেক্ষে কামাখ্যায় পুজো দেওয়ার যুক্তিও দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, সোনম নাকি রাজাকে জানিয়েছিলেন, তিনি সংসার শুরু করার আগে কামাখ্যায় পুজো দিতে চান। মা কালীর আশির্বাদে বাকি জীবন যাতে সুখে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে পারেন, তাই প্রার্থনা করবেন। এই শুনে মেঘালয় যেতে রাজি হন রাজা।
১১ মে বিয়ের পর তাঁরা ২০ মে পৌঁছন গুয়াহাটি। সেখান থেকে যান মেঘালয়ে। ২৩ মে নিখোঁজ হন সোহরার নংরিয়াট গ্রাম থেকে হোমস্টেতে চেক আউট করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। এরপর ২ জুন ওয়েসাওডং ফলসের কাছে একটি গিরিখাত থেকে উদ্ধার হয় রাজার মৃতদেহ।
পুলিশ জানিয়েছে, সোনম পরিকল্পিতভাবে রাজাকে বোঝান যে, কামাখ্যার পুজো না হলে সংসার শুরু করা উচিত নয়। সেই বিশ্বাসেই রাজা পরিকল্পনা করেন উত্তর-পূর্ব সফরের। কিন্তু ওদিকে সোনম তাঁর প্রেমিক রাজ কুশওয়ার সঙ্গে ঠিক করেছিলেন, পাহাড়ি জঙ্গলে সুযোগ বুঝে খুন করবেন। কারণ সেসব জায়গা নির্জন, প্রত্যন্ত তাই খুনের পর পালানো সহজ।
তবে পরিকল্পনায় কিছুটা সমস্যা হয়। ২২ ও ২৩ মে নংরিয়াট ট্রেকিং রুটে পর্যটকের ভিড় বেশি থাকায় সেখানে খুন করতে পারেননি তাঁরা। শেষে ওয়েসাওডং জলপ্রপাতে নিয়ে গিয়ে ধারালো দা দিয়ে রাজাকে কুপিয়ে খুন করা হয়। তাঁর দেহ ছুঁড়ে ফেলা হয় গভীর খাদে।
খুনের সময় ঘটনাস্থলেই উপস্থিত ছিলেন সোনম। প্রেমিক রাজ যদিও ঘটনাস্থলে আসেননি। গুয়াহাটি থেকে ফোনে তিন জন পেশাদার খুনির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছিলেন তিনি। তিনজনই ২১ মে পৌঁছেছিল গুয়াহাটিতে, সেখান থেকে যায় শিলং। একটি দোকান থেকে কেনা হয়েছিল দা। তা দিয়েই কোপানো হয়।
খুনের পর সোনম শিলং থেকে গুয়াহাটি ফেরেন। তারপর ট্রেনে ইন্দোর যান। সেখান থেকে উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু এই তিন রাজ্যে আসার আগে মা মাঝে অন্য কোথাও তিনি গেছিলেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সোনম ফোনে তখনও প্রেমিক রাজের সঙ্গে টানা যোগাযোগ রেখেছিলেন। পুলিশের মতে, সমস্ত ছক তিনিই কষে দিয়েছিলেন।
এই মুহূর্তে মেঘালয় পুলিশের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট দেশের নানা জায়গায় তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইস্ট খাসি হিলস জেলার পুলিশ সুপার বিবেক সিয়েম। তিনি জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ তাঁদের হাতে এসেছে। সোনম দাবি করেছেন, এর আগে কখনও তিনি মেঘালয়ে যাননি। তবে সেই দাবিও যাচাই করছেন তাঁরা।
পুলিশ সুপারের দাবি, জলজ্যান্ত প্রমাণের ভিত্তিতে 'ওয়াটারটাইট চার্জশিট' জমা দেওয়া হবে আদালতে। আপাতত সোনম, রাজ কুশওয়া এবং তিন পেশাদার খুনিকে শিলংয়ের আদালতে তোলা হয়েছে বুধবার। আট দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর হয়েছে।