শেষ আপডেট: 10th January 2025 09:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশ (Bangladesh) থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফেরা বাংলার মৎস্যজীবীদের উপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ দু’দুবার নস্যাৎ করেছে বাংলাদেশ। যদিও শুধু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নন, সংবাদমাধ্যমের কাছে একাধিক মৎস্যজীবী বাংলাদেশের কোস্ট গার্ড, পুলিশ এবং কারারক্ষীরা তাঁদের মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন। আহত একজন মৎস্যজীবীকে জেল হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হয়েছিল।
সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে প্রথমে বাংলাদেশের মৎস্য মন্ত্রক এবং বৃহস্পতিবার সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রক কড়া বিবৃতি দিয়েছে। অথচ ভারত সরকার রা কাড়ছে না। ঢাকার তৎপরতার মুখে নয়া দিল্লির নীরবতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চর্চা শুরু হয়েছে। দিল্লির নীরবতায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে সচেতনভাবে অমর্যাদার চেষ্টা কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশে ফিরে আসা মৎস্যজীবীদের অভিযোগকেই সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেছিলেন। পাশাপাশি ক্যামেরার মুখোমুখী হয়ে মৎস্যজীবারাও একই অভিযোগ করেন সাগরদ্বীপের অনুষ্ঠানে। দেশে ফিরে আসা মৎস্যজীবীদের মুখ্যমন্ত্রী তিনি স্বাগত জানান। রাজ্য সরকারের তরফে তাদের নানাভাবে সাহায্য করা হয়।
কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক, মৎস্যজীবীদের ফেরানোর কাজে যুক্ত ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং বিএসএফ জেলেদের অভিযোগ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। নীরব ঢাকায় বাংলাদেশের হাই কমিশনও। উল্টে বাংলাদেশ সরকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ নসাৎ করতে তাদেরই সাক্ষী মেনেছে।
কূটনৈতিক মহল বলছে, লক্ষণীয় হল, চট্টগ্রামের জেলে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে বন্দি ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ সাধু চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে একাধিকবার সরব হয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রক। দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণদীপ জয়সওয়াল একাধিকবার চিন্ময়ের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিবৃতি দিয়েছেন। যদিও নয়াদিল্লি চাপ বদায় রাখলেও ইউনুস সরকার গা করেনি। চিন্ময় এখন কারাগারে বন্দি।
কূটনৈতিক মহলের খবর, চিন্ময়-সহ যাবতীয় অমীমাংসিত বিবাদকে পাশ কাটিয়ে নরেন্দ্র মোদী ও মহম্মদ ইউনুস দু-দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে তৎপর হয়েছেন। বোঝাপড়ার দৃষ্টান্ত হিসাবেই ধৃত জেলেদের মুক্তিকে বড় করে প্রচারের আলোয় এনেছে দুই দেশ। জেলেদের দেশের জলসীমা অতিক্রম করে পড়শি দেশে ঢুকে পড়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বন্দি বিনিময়ও তেমনই একটি স্বাভাবিক পর্ব। বছরে গড়ে তিনবার দুই দেশ মৎস্যজীবীদের মুক্তি দিয়ে থাকে। গত ৫ জানুয়ারি সেই কাজটাই বেশ ঘটা করে করতে তৎপর ছিল ঢাকা ও নয়াদিল্লি।
মনে করা হচ্ছে সেই দায় থেকেই ঢাকার ভারতীয় হাই কমিশনার, দিল্লির পররাষ্ট্রমন্ত্রক, মৎস্যজীবীদের ছাড়াতে বাংলাদেশে যাওয়া উপকূল রক্ষী বাহিনী এবং বিএসএফ নীরব। গত কয়েকদিন যাবত সংবাদমাধ্যম মারফত দুই দেশেরই শীর্ষ কর্তারা চড়া সুর মৃদ্যু করার বার্তা দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে ফেরানো নিয়ে ঢাকা পীড়াপীড়ির রাস্তায় হাঁটছে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত চেয়ে ঢাকার নোট ভার্বালের জবাব দেয়নি ভারত। তাতেও নীরব সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রক।
অন্যদিকে, চাল, আলু, পেঁয়াজ পাঠিয়ে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ইউনুস সরকারের সামনে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মোদী সরকার। হিন্দুদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে দিল্লির গর্জন অতীত।
মৎস্যজীবী বিনিময়ের স্বাভাবিক ও প্রচলিত আয়োজনকে যে দু দেশের সম্পর্কের ফাটল জোড়া দেওয়ার দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে তা স্পষ্ট হয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বৃহস্পতিবারের লম্বা বিবৃতিতে।
ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ গভীর হতাশা এবং তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে যে, ভারতীয় মৎস্যজীবীদের প্রতি শারীরিক নির্যাতনসহ অন্যান্য মিথ্যা অভিযোগ-সহ ভিত্তিহীন মন্তব্য করা হয়েছে। বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে এই ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে, যা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আস্থার, সদিচ্ছা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ককে ক্ষুণ্ণ করে।