শেষ আপডেট: 31st July 2024 14:50
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আতঙ্কের প্রহর গুনছে সভ্যতা। যার অন্যতম কারণ, নির্বিচারে বনাঞ্চল ধ্বংস। যার জেরে ক্রমশ ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে পার্বত্য-তরাই অঞ্চল। জলবায়ুর এই পরিবর্তনের মূল অনুঘটক মূলত এগুলিই। দেশের প্রায় প্রতিটি কোণাই এর বাইরে নয়। প্রবল ঘূর্ণিঝড়, অতিভারী বৃষ্টি, হড়পা বান, বন্যা, ভূমিধস বা পাহাড়ে ধসে প্রাণ যাচ্ছে শয়ে শয়ে মানুষের। বহু গবেষণা ও সমীক্ষাতে ধরা পড়েছে মর্মন্তুদ এই ছবিটাই।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টার গতবছর ধসপ্রবণ এলাকার যে মানচিত্র প্রকাশ করেছিল, তাতে দেখা গিয়েছে, দেশের সবথেকে ধসপ্রবণ ৩০টি জেলার মধ্যে ১০টিই রয়েছে কেরলে। যার মধ্যে ওয়ানাড়ের স্থান ১৩-তে।
ওই রিপোর্টেই রয়েছে, কোঙ্কন পার্বত্য এলাকা ও পশ্চিমঘাট পর্বতের (তামিলনাড়ু, কেরল, কর্নাটক, গোয়া ও মহারাষ্ট্র) ০.০৯ মিলিয়ন বর্গকিমি এলাকা ধসপ্রবণ। তাতে আরও বলা হয়েছিল, কেরলের মোট ধসগুলির ৫৯ শতাংশ হয় কৃষিজ এলাকায়।
২০২২ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ১৯৫০-২০১৮ সালের মধ্যে ওয়ানাড়ের ৬২ শতাংশ বনাঞ্চল উধাও হয়ে গিয়েছে। পরিবর্তে কৃষিজমির পরিমাণ বেড়েছে ১৮০০ শতাংশ। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেল্থ-এ প্রকাশিত ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ওয়ানাড়ের ৮৫ শতাংশ এলাকা ছিল বনভূমিতে ঢাকা।
এমনিতেই হিমালয়ের পর পশ্চিমঘাট পার্বত্য এলাকা অত্যন্ত বিপজ্জনক ধসপ্রবণ। তা সত্ত্বেও রাজনীতি ও দলাদলির কারণে এই অঞ্চলকে এখনও ইকো-সেনসিটিভ এরিয়া বা পরিবেশগতভাবে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করা হয়নি। বছরের পর বছর ধরে এইসব এলাকার বনাঞ্চল ধ্বংস করে মানবজমিন গড়ে উঠেছে। যদি ওই ঘোষণা করা হতো, তাহলে প্রকৃতি নষ্ট করে এখানে এভাবে বসতি, কৃষিক্ষেত্র, চা বাগান গড়ে উঠতে পারত না। কিন্তু ভোট-সভ্যতার অবদানে তা হয়ে ওঠেনি।
ওই ৬টি রাজ্যের মধ্যে মহারাষ্ট্র ও গোয়া ইকো-সেনসিটিভ এরিয়ার এলাকা কমানোর আর্জি জানিয়েছিল কেন্দ্রের কাছে। এবং তৎকালীন কর্নাটক সরকার ২০২২ সালে কেন্দ্রকে জানায় ওই খসড়া প্রত্যাহার করে নিতে। কারণ এতে রাজ্যের জনজীবনের উপর প্রভাব পড়বে। ২০১৪ সালের মার্চ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচটি খসড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও কেরল ও মূলত কর্নাটক এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পরিবেশগত বিপজ্জনক এলাকা নিয়ে।
এখন জানা যাচ্ছে, ষষ্ঠ একটি বিজ্ঞপ্তি দু-একদিনের মধ্যে জারি হতে পারে। কারণ পঞ্চমটির মেয়াদ একমাস আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। পরিবেশগত বিপজ্জনক এলাকা বলে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব না হলে বনভূমি ধ্বংস করে বেআইনি খনি খনন, নির্মাণকাজ চলতেই থাকবে। আর এরকম আরও ধ্বংসলীলার মুখোমুখি হতে হবে মানুষকে।