শেষ আপডেট: 18th October 2024 13:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতের জেমস বন্ড ০০৭ বিকাশ যাদব। যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। শুধু খুঁজছে বলা ভুল, তাঁর নামে হুলিয়া জারি করেছে ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন। একটি পোস্টারও ছাপিয়েছে তারা। কিন্তু, কে এই বিকাশ যাদব? কেনই বা তাঁকে এমন নাছোড় হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে আমেরিকা? তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগই বা কী?
বিদেশে গা-ঢাকা দিয়ে বেড়ানো নিষিদ্ধ খলিস্তানি জঙ্গি সংগঠন শিখস ফর জাস্টিসের নেতা গুরপতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে খুনের চক্রান্ত কষার অভিযোগে আমেরিকার চোখে এখন ওয়ান্টেড তালিকায় ভারতের গুপ্তচর সংস্থার কর্মী বলে অভিযুক্ত বিকাশ। কারণ পান্নুন মার্কিন নাগরিক। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, যাদব এখন আর ভারত সরকারের কর্মী নন, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাস ও তাদের রহস্যে ঘেরা জীবন
এদেশের প্রথম গুপ্তচর সম্ভবত হনুমান। রামের নির্দেশে লঙ্কায় ঢুকে সীতার খোঁজ নিতে যাওয়া থেকে সোনার লঙ্কায় আগুন ধরিয়ে তছনছ করে দেওয়া। নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ঢোকা পর্যন্ত হনুমান ছিলেন রামায়ণের রাম-রাবণ যুদ্ধের অন্যতম চর। যে কোনও মুহূর্তে ছদ্মবেশ ধরায় সিদ্ধহস্ত। ঠিক একইভাবে গ্রিক কাব্য-সাহিত্য থেকে রোমান যুগে এমনকী যিশু খ্রিস্টকে ধরিয়ে দেওয়াও ছিল একপ্রকার চরের কাজ।
প্রাচীন রাজারাজড়ারা গুপ্তচর হিসেবে সুন্দরী রমণীকেও ব্যবহার করতেন। যে ধারণা থেকে চাণক্য বা কৌটিল্যের যুগে বিষকন্যার কথাও পাওয়া যায়। নাচেগানে পটিয়সী এই বিষকন্যারা রাজাকে অনুরক্ত করে খুন করতেন। অথবা গোপন তথ্য সংগ্রহ করতেন। বিশ্বযুদ্ধ কালীন মাতাহারি তো বিখ্যাত ও প্রথম মহিলা গুপ্তচর। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ঠান্ডাযুদ্ধের সময়ে সোভিয়েতের কেজিবি এবং আমেরিকার সিআইএ তো বিখ্যাত ইতিহাসে। হিটলারের জমানায় জার্মানির হাতেও খুবই ধূর্ত চর সংস্থা ছিল। এখন ইজরায়েলের চর সংস্থা মোসাদ তো খেল দেখাচ্ছে একের পর এক। তেমনই পাকিস্তানের রয়েছে আইএসআই। ভারতের র। বিকাশ যাদব এই র-এর হয়ে কাজ করতেন বলে মার্কিন অভিযোগ।
ইয়ান ফ্লেমিং-এর জেমস বন্ড সিনেমার পর্দার প্রথম জনপ্রিয় সিক্রেট এজেন্ট। যার কোড নেম ছিল ০০৭। যার কাজ ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আর্থার কোনান ডয়েলর শার্লক হোমস, আগাথা ক্রিস্টির এরকুল পোয়ারো, বাংলার ব্যোমকেশ বা ফেলুদা নিতান্তই সাদামাঠা, ঘরোয়া গোয়েন্দা এদের কাছে।
হিন্দি ছবিতেও সিক্রেট এজেন্ট নিয়ে অদ্ভুতুড়ে বেশ কয়েকটি ছবি তৈরি হয়েছে। যেমন- ফ্যান্টম, এজেন্ট বিনোদ, মিশন মজনু, বেলবটম, বেবি, নাম শাবানা। যেখানে কিছু সত্যি, কিছু কল্পনা থাকলেও র-এর কাজের কিছু আন্দাজ পাওয়া যায়। যে ছবিগুলোর প্রত্যেকটিতে বলা আছে, চর সংস্থার কাজই হল এমন গোপন যা ধরা পড়লে নিজের দেশও আর তাকে স্বীকার করে না।
কে এই বিকাশ যাদব?
বিকাশ যাদবের জন্ম ১৯৮৪ সালের ১১ ডিসেম্বর, হরিয়ানায়। উচ্চতা ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি থেকে ৬ ফুট ১ ইঞ্চির মতো। কোড নেম সিসি-ওয়ান। ভারতীয় বিকাশের ছদ্মনাম 'আমানত'। এফবিআইয়ের পোস্টার অনুযায়ী বিকাশের এই নামটি ব্যবহার করা হয় সহযোগী, অন্য ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের অফিসার বিকাশ যাদব র-এ ডেপুটেশনে গিয়েছিলেন। মার্কিন বিচার বিভাগের বিবৃতি অনুসারে, যাদবের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। সে ৫৩ বছর বয়সি নিখিল গুপ্তার সঙ্গে যুক্ত থেকে পান্নুনকে খুনের চক্রান্ত করেছিল। যাদব এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
মার্কিন বিচার বিভাগের বক্তব্য অনুযায়ী, যাদব ভারত সরকারের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের কর্মী। সিনিয়র ফিল্ড অফিসার হিসেবে তিনি কর্মরত। তাঁর কাজের দায়িত্ব ছিল নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ এবং চরবৃত্তি করা।
তদন্ত কী বলছে?
২০২৩ সালের মে মাস নাগাদ যাদব নিখিল গুপ্তাকে খুনের দায়িত্ব দেয়। গুপ্তাও একজন ভারতীয়, যার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাদক ও অস্ত্র কারবারে জড়িত বলে পরিচিত ছিল। যাদবের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে গুপ্তা এক ভাড়াটে অপরাধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। কিন্তু সেই ব্যক্তি ছিল আমেরিকার ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সোর্স। সে গুপ্তাকে ভাড়াটে খুনের সঙ্গে যোগাযোগ করায়। যে আসলে ডিইএ-র গোপন অফিসার। যাদব তখন গুপ্তার মধ্যস্থতায় এক লক্ষ মার্কিন ডলারে রফা করে।
এরপর গুপ্তা খুনের গোটা পরিকল্পনা করে যেমন শিকারের ব্যক্তিগত তথ্য, নিউইয়র্কের বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর, বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও এবং তার প্রতিদিনের কাজকারবার। যাদব এও জানায়, প্রতি মুহূর্তের খবরাখবর তাঁকে দিতে হবে। ২০২৩ সালে ১৮ জুন বা তার কাছাকাছি মুখোশধারী বন্দুকবাজরা খলিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরকে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় গুরুদ্বারের বাইরে গুলি করে খুন করে। এর পরদিনই বিকাশ যাদব গুপ্তাকে জানিয়ে দেয়, আর অপেক্ষা নয়, এখনই এই কাজ করে ফেলতে হবে।